English Version
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০১৬ ১১:৩১

সাগরে যেভাবে বিধ্বস্ত হয় কার্গো বিমানটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাগরে যেভাবে বিধ্বস্ত হয় কার্গো বিমানটি

বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত ‘আন্তনভ-২৬’কার্গো বিমানটির দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ জানাগেছে। দুর্ঘটনায় সময় বিমানের বাম পাশের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এতে বিমানের পাইলটসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর সমুদ্রের জেলেরা আহত একজন বিমান পাইলটকে উদ্ধার করেন।

এদিকে বিমান দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বেসরকারি কোম্পানি ট্রু এভিয়েশন লিমিটেডের লোকাল এরিয়া ম্যানেজার অরূপ অধিকারী জানান, তাদের ‘আন্তনভ-২৬’ বিমানটি কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ৮১০ বক্স চিংড়ি পোনা নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় সকাল ৯টা ৫ মিনিটে। এটি আকাশে ওঠার পর ৯টা ১০মিনিটের দিকে বিমানের পাইলট তাকে অবহিত করেন বিমানটির বাম পাশের ইঞ্জিল বিকল হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিক ভাবে পাইলট জরুরিভাবে অবতরণের অনুমতি চান। বিমান বন্দর কৃর্তপক্ষ অবতরণের অনুমতিও দেন। কিন্তু এর মধ্যে সকাল ৯টা ২৫মিনিটে বিমানটি নাজিরারটেক পয়েন্টে বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে দুটি ইঞ্জিন রয়েছে। একটি বাম পাশে, অপরটি ডান পাশে। দুর্ঘটনার সময় পাইলট বাম পাশের ইঞ্জিনটি বিকল হওয়ার কথা জানান।

এদিকে সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেরা বলেন, একটি বিমান হঠাৎ নিচের দিকে নেমে আসতে দেখে তার প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গেছে। পরে বিকট শব্দে বিমানটে সাগরে আছড়ে পড়ে। এসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উৎসুক জেলেরা বিমানটির কাছে গেলে মানুষের আত্মচিৎকার শুনতে পান। পরে তারা সেখান থেকে দুজনকে উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড এবং পুলিশকে খবর দেন। এছাড়া বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারও এসময় আকাশে চক্কর দিতে দেখেছেন তারা।   

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নোবেল কুমার বড়ুয়া জানান, হাসপাতালে আনা দুজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আরেকজনকে চিকিৎসা দেয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

ট্রু এভিয়েশন লিমিটেড কৃর্তপক্ষ জানিয়েছেন, হাসপাতালে যার মৃত্যু হয়েছে তিনি ওই বিমানের প্রকৌশলী। তার নাম কুলিশ আন্দ্রে। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে তার সহযোগী ডলো ডারম্যানকে।

নৌ বাহিনীর ক্যাপ্টেন মোরসালিন জানান, ভাটায় পানি নেমে যাওয়ার পর বিমানের ভেতরে পাওয়া যায় নিখোঁজ দুজনের লাশ। তাদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনাস্থলে নৌ বাহিনীর উদ্ধারকারি জাহাজ অতন্দ্র ও অপরাজেয় আছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারি পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাগরে ভাটা শুরু হওয়ার কারণে দূর্ঘটনাকবলিত বিমানটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২/৩ কিলোমিটার দূরে সরে গেছে। ফলে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পরে পানি নেমে গেলে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

ট্রু এভিয়েশন লিমিটেড কৃর্তপক্ষ জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া শেষ দুজনের মধ্যে একজন পাইলট মুরাদ এবং অপর জন কো-পাইলট ইভান। তিন জনের মৃত দেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার সাধন কুমার মোহন্ত জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর ক্রুসহ চার আরোহী নিয়ে উড়োজাহাজটি সমুদ্রের নাজিরারটেক পয়েন্টে বিধ্বস্ত হয়। তবে কি কারণে এটি বিধ্বস্ত হয়েছে তিনি জানেন না।

এদিকে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান বলাকা হ্যাচারী। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নজিবুল ইসলাম জানান, র্দীঘদিন ধরে কার্গো নিয়ে তারা পোনা পরিবহন করেন। এই প্রথম কোন বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। এতে এক কোটি পোনা ছিল, যার বাজার মূল্য ৩৫ কোটি টাকা।

এদিকে বিমান দুর্ঘটনায় ৩জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন জানান, তিন জনের মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর আইনগত প্রক্রিয়া শেষ তাদের দেহ বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।