English Version
আপডেট : ৫ মার্চ, ২০১৬ ১৩:১০

সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থাইল্যান্ড আমিরাত সৌদি ভিসা ভোগান্তিতে বাংলাদেশই নাগরিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া থাইল্যান্ড আমিরাত সৌদি ভিসা ভোগান্তিতে বাংলাদেশই নাগরিকরা

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের জন্য ভিসা পেতে ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। নানা প্রয়োজনে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব-আমিরাত ও সৌদি আরবের ভিসা পেতে পোহাতে হচ্ছে বিড়ম্বনা। উন্নত দেশগুলো তুচ্ছ কারণে বা কোনো কারণ না দেখিয়েই ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে। আবার যাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে তারাও শিকার হচ্ছেন ভোগান্তির। বিভিন্ন দেশের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। যখন ভিসা পাওয়া যাচ্ছে তখন আর ভ্রমণের প্রয়োজনই থাকছে না। অবশ্য ভিসা সাক্ষাত্কারের জন্য অনলাইনে তারিখ পাওয়াও কোনো কোনো দেশের ক্ষেত্রে সৌভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসবের সুযোগে বাণিজ্য করছে দালালরা। শুধু প্রতিবেশী বা মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমঘন দেশগুলোই নয়, ইউরোপের কয়েকটি দেশের ভিসা সেন্টার ঘিরেও গড়ে উঠেছে দালাল চক্র। ভিসা প্রার্থীদের তথ্যানুসারে, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার থাইল্যান্ড দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করে পাসপোর্ট জমা দিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশিদের। রোগী, ব্যবসায়ী, পর্যটক ও শিক্ষার্থী ভিসার আবেদন করে ভিসা পাচ্ছেন না, আবার পাসপোর্টও ফেরত পাচ্ছেন না। অথচ আগে তিন-চার কর্মদিবসের মধ্যে থাইল্যান্ডের ভিসা পাওয়া যেত। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বর থেকে পাসপোর্ট জমা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার ভরসায় থাকতে হচ্ছে। কারণ থাই ইমিগ্রেশন বিভাগ ভিসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে যে কোনো ভিসার আবেদন অনুমোদন করছে ব্যাংকক থেকে। আবেদনের প্রতিটি কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। নতুন পদ্ধতিতে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে আবেদনকারীদের ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে। একই ধরনের দীর্ঘসূত্রতার ভোগান্তি তৈরি হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিত্সার জন্য প্রায়শ সিঙ্গাপুর যাওয়া বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে। মালয়েশিয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার পর এখন সব ধরনের ভিসাই বন্ধ করে দিয়েছে। পরিচিতি বা বিশেষ বিবেচনায় পাওয়া যাচ্ছে মালয়েশিয়ার ভিসা। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ভিসাসেবা নয়াদিল্লিতে সরিয়ে নিয়েছে। আগে সিলেট থেকেও ভিসা ইস্যু করত ব্রিটিশ সরকার। এখন তা দিল্লি থেকে দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক ভিসাপ্রার্থীকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির নির্ধারিত তারিখের পর হাতে পেয়েছে ব্রিটিশ ভিসা। অবশ্য এখন সময় কিছুটা কমিয়ে নিয়ে এসেছে ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন। কিন্তু কমে এসেছে ভিসা প্রাপ্তির সংখ্যা। ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর ইউকে ভিসা প্রসেসিং সেন্টার ঢাকা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের পর থেকে ভিজিট ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, স্পাউস ভিসা আগের ৭০ ভাগের তুলনায় বর্তমানে ২০ ভাগে নেমে এসেছে। সূত্র মতে, অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে জটিল আর কঠিন হলো কানাডার ভিসা পাওয়া। কারণ বাংলাদেশ থেকে কানাডা ভিসা সেন্টার বেশকিছু দিন আগেই চলে গেছে সিঙ্গাপুরে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, বায়োমেট্রিক টেস্ট শেষে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে পাসপোর্ট পাঠানো হয়। এরপর শুরু হয় অপেক্ষার পালা। অন্যদিকে, ইতালি ভিসা সেন্টার ঘিরে রয়েছে নানান অভিযোগ। সেখানে গড়ে উঠেছে দালাল চক্র। তারা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে ভিসা সাক্ষাত্কারের তারিখ দিচ্ছেন এমন অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়। সেখানে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সাক্ষাত্কারের তারিখের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১০ মাস থেকে এক বছর। ইউরোপের আরেক দেশ পর্তুগালের ভিসার জন্যও বাংলাদেশিদের রয়েছে প্রবল আগ্রহ। কারণ সেখানেও প্রচুর বাংলাদেশি বসবাস করেন। তাদের আত্মীয়স্বজনরা যেতে চান পর্তুগালে। কিন্তু পর্তুগালের কোনো দূতাবাস নেই ঢাকায়। দিল্লি থেকে ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশেই বাংলাদেশের বড় সংখ্যক জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে জনশক্তি রপ্তানির নিয়মগুলো মেনে চলা হয়ে থাকে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে ধর্মপ্রাণ বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ যান ওমরাহ হজ পালন করতে। কিন্তু ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ যাত্রীদের ১১ হাজার ৪৮৫ জন দেশে না ফেরার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব ২০১৫ সালে বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রীদের অনুকূলে ভিসা ইস্যু করেনি; যা এখনো প্রায় বন্ধ। সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি ঢাকায় তাদের ভিসা সেন্টার খুললেও ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোর। ব্যাংক ব্যালান্স বা অন্যান্য যোগ্যতা থাকলেও ভিসা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। দায়িত্বপ্রাপ্তদের মর্জিও এখানে বড় ভূমিকা রাখছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দাফতরিক প্রক্রিয়া আগের তুলনায় বেশ সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্য হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের সংস্কার উদ্যোগও প্রশংসনীয়। কিন্তু ভারতীয় ভিসার অনলাইনে সাক্ষাত্কারের তারিখসহ ই-টোকেন পাওয়া আগের মতোই দুরূহ। এ জন্য গুলশান-বনানীভিত্তিক বেশকিছু দালালচক্র ২-৫ হাজার টাকায় ভারতীয় ভিসার সাক্ষাত্কারের তারিখ পাইয়ে দিতে বাণিজ্য চালিয়েই যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেকাংশেই সহজ হয়েছে মার্কিন ভিসা পদ্ধতি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইস্যু হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদের মাল্টিপল ভিসা। ফলে যারা ভিসা পাওয়ার যোগ্য তারা খুব সহজেই পেয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত স্থান যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা। এ ধরনের পদ্ধতি অন্যদেরও অনুকরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন নানান প্রয়োজনের বিদেশে ভ্রমণকারী বাংলাদেশিরা। ঢাকার পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, ভিসা দেওয়ার এখতিয়ার দেশগুলোর একান্তই নিজস্ব বিষয়। তবে পাসপোর্ট জমা রেখে ভিসা দিতে দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে থাইল্যান্ড ও ব্রিটিশ সরকারসহ অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের আলোচনাও হয়েছে। তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত কারণ দেখানোরও অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ভিসা ভোগান্তির সবচেয়ে বড় শিকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের শিকার হওয়ার পরই ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শুরু করেছে। ফলে বেড়েছে ভিসা প্রত্যাখ্যানের আধিক্য। তারা বলছেন, যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বেশ জোরের সঙ্গে বারবার বলা হচ্ছে, এ দেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের কোনো ঠাঁই হবে না। যাবতীয় জঙ্গি কার্যক্রম দমনের ব্যাপারেও সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সে অবস্থায় বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনকে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমে ভিসা জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। 

সেত্র- বাংলাদেশ  প্রাতিদিন