দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এ দুটো পত্রিকা ২০ বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে লেখালেখি হচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে এ দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না। ভাল কিছু লিখলেও শেষদিকে আমাকে খোঁচা দেবে। এ খোঁচা খেয়ে আমি আত্মবিশ্বাস হারাব। তবে পড়বো কেন?
দশম সংসদের নবম অধিবেশনে গত সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম কোন রকমে গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করে অসাংবিধানিক সরকার এলে তাদের কপাল খুলবে। সেই ষড়যন্ত্রেই তারা লিপ্ত। এদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। গণতন্ত্রকে এতটুকু ধরাশায়ী করা যায়, অগণতান্ত্রিক কিছু আসে তাদের কপাল খুলবে- সেই অবস্থা বাংলাদেশে কখনো হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে যতই ষড়যন্ত্র করুক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। কোন ষড়যন্ত্রই দেশের এই অগ্রগতি রুখতে পারবে না।
মাহফুজ আনামকে ডিজিএফআই এর সাবেক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জে. আমিন ও ব্রিগেডিয়ার বারীর স্টাফ আখ্যায়তি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে তাঁর পত্রিকা যতকিছু লিখেছে সেগুলো নাকি ডিজিএফআই সাপ্লাই দিয়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে লেখা থাকে নির্ভিক সাংবাদিকতা। আলোর কথা বলে অন্ধকারের কাজ করে। এই দুটো পত্রিকা হয় ডিজিএফআইয়ের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে নতুবা মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না থাকলে অসত্য সংবাদ ছাপাবে কেন? ব্রিগেডিয়ার আমিন ও বারীর চোখের আলো হয়ে ছিলেন ওই দুটি পত্রিকা। তাদের কাজই হলো দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক। এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, রাজনীতি করতে চাইলে, ক্ষমতায় যেতে চাইলে তারা রাস্তায় নামুক, জনগণের কাছে যাক। রাজনীতি করার এতো শখ, ক্ষমতায় যাওয়ার এতো শখ থাকলে- মানুষের ভোট নিয়ে আসুক।
এক এগারর ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ান ইলেভেনে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে প্রথমেই আমার ওপর আঘাত আসে। আমি তো সরকারে ছিলাম না, বিরোধী দলে ছিলাম। তবে কেন প্রথমে আমাকে গ্রেফতার করা হলো। আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে ওই দুটি পত্রিকা একের পর এক মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে গেছে। ডিজিএফআইয়ের ব্রিগেডিয়ার বারী ও আমিনের হাত থেকে ওই সময় কেউ-ই রেহাই পায়নি। ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ছাত্রদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের সঙ্গে কী সখ্যতা ছিল তা কী প্রথম আলোর মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামরা দিতে পারবেন?
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আরেকজন জড়িত। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য মাঠে নেমেছিলেন। তার দেওয়া তালিকা নিয়ে একজন সম্পাদক লোক যোগাতে নেমেছিল। কিন্তু কেউ আসেনি। ওই ভদ্রলোককে আমিই মোবাইল ফোনের ব্যবসা করতে দিয়েছিলাম। ব্যাংকের এমডি পদ আইন লঙ্ঘন করে ১০ বছর পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। আইন লঙ্ঘন করলেন, মামলায় হারলেন- আর সব দোষ শেখ হাসিনার। এমডি পদ হারানোর ক্ষোভ পড়লো গিয়ে পদ্মা সেতুর ওপর। আমেরিকার বন্ধুকে দিয়ে অর্থ বন্ধ করালেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম। এখনও সেই প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। একটি এমডি পদ হারানোর ক্ষোভের আগুনে জ্বললো আমাদের বাংলাদেশ। নোবেল পুরস্কার পেয়েও একটি এমডির পদ ছাড়তে পারেন না। ওখানে কী মধু আছে। এতো বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তবে মর্যাদাটা কোথায় থাকলো? অনেকে ভেবেছিল বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা না নিয়ে বাংলাদেশ চলতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। সেই ভুলের খেসারত দেশের জনগণ দেবে না। রাজনৈতিক ভুলের খেসারত তাদেরই দিতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তারা দাঁড়াতে পারছে না। কারণ দেশের মানুষ জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করে না।
সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি একটি জঙ্গী দল। বিএনপি-জামায়াত জোট একটি জঙ্গী সংগঠন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এরা এখনও সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যেই হত্যা, খুন, অস্ত্র, বোমাসহ ধরা পড়ছে তাদের সবার গোড়া খুঁজলে দেখা যাচ্ছে আগে হয় ছাত্রশিবির কিংবা ছাত্রদল করেছে। পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে রক্ষা করছেন।
শিশু হত্যাকারীদের যে দেশের আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে সেই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সামান্য কারণে শিশু হত্যা করে তারা সমাজের ঘৃণ্য জীব। এর আগে কয়েকজন শিশু হত্যাকারীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। আমি আদালতের কাছে অনুরোধ জানাব, শিশু হত্যাকারীদের যেন তারা সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়। যাতে ভবিষ্যতে কেউ শিশু হত্যার সাহস না পায়। পাড়া-মহল্লায় শিশু নির্যাতন বন্ধে দেশের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই শিশু হত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতো ছোট ছোট শিশুদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর জীঘাংসা কেন? এসব খুনীরা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট জীব, এদের প্রতি আমি ঘৃণা জানাই।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের প্রতি অনুরোধ জানাব, শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত খুনীরা কেউ পালিয়ে থাকলে তাদের ধরিয়ে দিন, সরকার তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবে। সম্প্রতি গ্যাসের বিস্ফোরণে পুরো একটি পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে রয়েছেন একটি মাত্র দিয়াশলাইয়ের কাঠি খরচ হওয়ার ভয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে রাখেন। একটি কাঠির চেয়ে জীবনের মূল্যে বেশি না। আর যেখানে গ্যাসের চুলা জ্বলবে সেখানের জানালার দরজা খুলে রাখার জন্যও প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে। তাই যাদের একটি গাড়ি দরকার, তারা ২/৩টা গাড়ি কিনছে। এসব কারণেই যানজট বাড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ আমরা গড়বো, উন্নত করবো, আমরাই পারব- এটা মনে রেখেই সবাইকে চলতে হবে। আমরা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। আমরা পারবো না কেন? আমরা কেন পরমুখাপেক্ষী হব? আমরা সবাই মিলে কাজ করলে দেশ দরিদ্র থাকার কথা না। কতটুকু দেশকে দিতে পারলাম, দেশের জনগণকে কতটুকু দিতে পারলাম- এটাই আমার রাজনীতি।
সংসদ নেতা বলেন, আমাদের দেশের মানুষ কথা বলতে পছন্দ করে। এখন ৩২টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছি। আর এসব টিভিতে সমানভাবে কথা বলে যাচ্ছেন। আবার বলছেন কথা বলার স্বাধীনতা নেই! সত্য-মিথ্যা দিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে সবাই কথা বলেই যাচ্ছেন। কাউকে তো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করি না। সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছি। মিডিয়ার জন্য আমি যত সুযোগ দিয়েছি, অতীতে কেউ দেয়নি। কিন্তু আমিই সবচেয়ে বেশি ভিকটিম।