English Version
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৩:৪৭

১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর প্রতীকী বিচারে তদন্ত সংস্থার আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর প্রতীকী বিচারে তদন্ত সংস্থার আপত্তি

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার প্রতীকী বিচারের উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান।

সংস্থাটির কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘একটি আদালত বিদ্যমান থাকা অবস্থায় অন্য কোনো আদালত হতে পারে না। সেটা প্রতীকী হোক আর যা ই হোক। এটা সঠিক হবে না।’

মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিদেশীয় চুক্তির আওতায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক ১৯৫ সেনা সদস্যকে নিজ দেশে বিচারের মুখোমুখি করার শর্তে ফেরত নেয় পাকিস্তান। এরপর ৪৪ বছর পার হলেও তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি দেশটি।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান গতবছর ডিসেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আদালতে’ ওই ১৯৫ জনের প্রতীকী বিচারের ঘোষণা দেন।

সেদিন তিনি বলেন, আগামী ২৬ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই প্রতীকী বিচার হবে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হান্নান খান বলেন, ‘এটা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য হতে পারে, কিন্তু বিচার হতে পারে না।’

১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ‘গণআদালত’ গঠন করে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার শুরু করেছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’।

বর্তমান ট্রাইব্যুানালে বিচারাধীন ও দণ্ডপ্রাপ্ত অনেকেরই বিচার শুরু হয়েছিল সেই প্রতীকী আদালতে।

এ বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হান্নান খান বলেন, ‘তখন (রাষ্ট্রের উদ্যোগে) কোনো আদালত কিংবা ট্রাইব্যুনাল ছিল না।’

সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পাক বাহিনীর এদেশীয় সহযোগীদের বিচার ও কয়েকজনের দণ্ড কার্যকরের পর পাকিস্তান ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করলে ঢাকায় দেশটির হাই কমিশনারকে ডেকে ‘কড়া প্রতিবাদ’ জানায় বাংলাদেশ সরকার।

এর এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার দায় অস্বীকার করে পাকিস্তান।

এ ধরনের ঘটনাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি নতুন করে ১৯৫ জন পাক সেনার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।

হান্নান খান বলেন, সেই ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে ইতোমধ্যেই অনুসন্ধান শুরু করেছে তদন্ত সংস্থা।

‘আমরা তথ্য-উপাত্ত নেওয়া শুরু করেছি। সাড়াও পাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিচ্ছি। সরকারও চিঠি দিচ্ছে।’

তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার কথা বলা হলেও আত্মসমর্পণের পর তাদের প্রথমে ভারতীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। এরপরেও অনেকেই পাকিস্তানে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন। সুতরাং ওই সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ৩৬তম প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।