English Version
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৫:৪৮

ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার পাচ্ছেন ইপিজেড শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার পাচ্ছেন ইপিজেড শ্রমিকরা

 

ইপিজেড শ্রম আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার, যার মাধ্যমে দর কষাকষির অধিকার এবং স্থায়ী মজুরি বোর্ড পেতে যাচ্ছেন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার শ্রমিকরা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই আইনের খসড়া অনুমোদন পায়।

বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, শ্রম আইন ইপিজেডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, তাই নতুন এ আইন করা হচ্ছে।২০১৪ সালের ৭ জুলাই ইপিজেড শ্রম আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। তাতে বলা হয়েছিল, সমিতি করতে চাইলে কোনো প্রতিষ্ঠানের ৩০ ভাগ শ্রমিককে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীদের মধ্যে ভোটের ব্যবস্থা করা হবে এবং তাদের মধ্যে ৫০ ভাগ সমিতি করার পক্ষে ভোট দিলে সমিতি অনুমোদন পাবে।

খসড়া এ আইনের ১৬ অধ্যায়ে ২০২টি ধারা রয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, আইন অনুযায়ী শ্রমিকরা অবসর সুবিধা, মৃত্যু ও দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ, বাধ্যতামূলক গ্রুপ ইন্সুরেন্স, ভবিষ্য তহবিল, অর্জিত ছুটির নগদায়ণ, পূর্ণ বেতনের সমান হারে বছরে দুটি উৎসব বোনাস এবং ১৬ সপ্তাহের প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবেন।

ইপিজেডে সংগঠন করার অধিকার আগে ছিল না। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটা আইনে আনা হয়েছে। সংগঠনের অধিকারকে ‘শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।এই শ্রমিক কল্যাণ সমিতি ও ট্রেড ইউনিয়ের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নামটা একটু শ্রুতিমধুর।

তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী ট্রেড ইউনিয়ন বা সিবিএ এবং ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক কল্যাণ সমিতির মধ্যে যৌথ দর কষাকষির এজেন্টের কাঠামো গঠন, পরিষদের মেয়াদ বা কার্যাবলির মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।

শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার, শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন, যৌথ দর কষাকষিতে প্রতিনিধিত্বের অধিকার, শিল্পবিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, ধর্মঘট করার অধিকার এবং চাকরির নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়গুলো যুক্ত করে ইপিজেড শ্রম আইনকে ‘সুসংহত’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য্য করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আইএলওসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোতে শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছিল জানিয়ে শফিউল বলেন, আইএলও কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ওই সনদকে ‘সম্মান দেখিয়েই’ বাংলাদেশ এ আইন করছে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম মজুরি বোর্ড সব ধরনের শ্রমিকদের জন্য যে মজুরি কাঠামো ঠিক করে দেয়, এতোদিন সেই কাঠামোতেই বেতনভাতা পেয়ে আসছিলেন ইপিজেডের শ্রমিকরা। নতুন আইন হলে ইপিজেডের শ্রমিকদের জন্য একটি স্থায়ী মজুরি বোর্ড গঠন করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।খসড়ায় বলা হয়েছে, শ্রমিক ও বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি ছাড়াও নিরপক্ষে উৎস থেকে প্রতিনিধি নিয়ে এই স্থায়ী মজুরি বোর্ড গঠন করা হবে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান এই বোর্ডের প্রধান হবেন।

শফিউল আলম বলেন, এই মজুরি বোর্ড প্রয়োজন মনে করলে ইপিজেডের শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নেবে।

এ আইনের আওতায় ইপিজেডের শ্রমিকদের অবসরের বয়স হবে ৬০ বছর। ২৫ বছর চাকরি পূর্ণ হলে একজন শ্রমিক অবসর সুবিধা প্রাপ্য হবেন।খসড়া আইন অনুযায়ী কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে দুই লাখ টাকা এবং সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে গেলে সোয়া দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন শ্রমিকরা।