English Version
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১১:২৭

৪৮ মাসেও ধরা পড়েনি সাগর-রুনির হত্যাকারী

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
৪৮ মাসেও ধরা পড়েনি সাগর-রুনির হত্যাকারী

 

সরকারের পক্ষ থেকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হলেও বাংলাদেশের সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের চার বছরেও কোনো কূলকিনারা হয়নি। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নিজেদের ভাড়া বাসায় হত্যার ঘটনার পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু ৪৮ মাস পার হয়ে গেলেও, এই হত্য রহস্য এখনো অমীমাংসিত। ধরা পড়েনি হত্যাকারীরাও। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কিনারা না হওয়ায় হতাশ তাদের স্বজনরাও।

প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র‍্যাব। মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার জন্য নিম্ন আদালত, উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৯বার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে, কিন্তু এখনো এই তদন্তের কোনো কিনারা হয়নি।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা, এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, মামলাটি স্পর্শকাতর এবং জটিল হওয়ায় তদন্তে সময় লাগছে। মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, বিভিন্ন পয়েন্টে তদন্ত চলছে। কোর্টের চাহিদা অনুযায়ী, নিয়মিত সেখানে প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান। তিন বছরে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ করতে চাই না। আমাদের কাছে থাকা তথ্যগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ আমরা করছি। প্রথমে স্থানীয় থানা, পরে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করে। নজিরবিহীনভাবে, দুই মাস পর তদন্তের বিষয়ে উচ্চ আদালতে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন ডিবির কর্মকর্তারা।

এরপর র‍্যাব এই মামলার তদন্তভার পায়। কিন্তু চার বছরেও কোনো কিনারা না হওয়ায় এখন হতাশ মেহেরুন রুনির ভাই, মামলার বাদী নওশের আলম। তিনি বলছেন, আমরা তো আসলে কোনো আশা দেখি না। বরং প্রতিদিনই হতাশা বাড়ছে। তিনি বলছেন, কেন এতদিনেও মামলার রহস্য জানা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন আমাদেরও। হয়তো যারা তদন্ত করছে, তাদের যোগ্যতার অভাব রয়েছে। আর সেটি না হলে, হয়তো প্রভাবশালী কেউ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে, সে জন্য ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। নওশের আলম বলছেন, এই তদন্তের রহস্যের জন্য সব জায়গায় আমরা গিয়েছি। কিন্তু এখন আর আমরা জানি না, আর কার কাছে আমরা যেতে পারি। কার সঙ্গে কথা বললে এর সমাধান হবে।

সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের অভিযোগ, একটি মহলের অনাগ্রহের কারণেই এই মামলার কিনারা হচ্ছে না। যদিও বরাবরই তদন্তে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি করা হয়েছে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। প্রথম থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পর্যবেক্ষণ করেছেন সাংবাদিক এবং ব্লগার আবু সুফিয়ান। নিজেদের সহকর্মীরা নিহত হলেও, সাংবাদিকরাও এ ক্ষেত্রে তেমন একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি বলেই তিনি মনে করেন।

আবু সুফিয়ান বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর একটি প্লাটফর্মে এসে সাংবাদিকরা সবাই আন্দোলন করতে শুরু করেন। সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে রাজপথে এসে আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাওয়াতের পর সেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। নিহতদের স্বজনরা বলছেন, যতই দিন যাচ্ছে, তারা যেমন হতাশ হয়ে পড়ছেন, তাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও চাপা পড়ে যাচ্ছে। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘ এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রায়ই বাবা-মায়ের নানা স্মৃতির কথা সে বলে, তবে হত্যাকাণ্ডের দিনের কোনো ঘটনা আর সে মনে করতে চায় না।