এসডিজি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) সাফল্যের ওপর ভর করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এজন্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের প্রয়োজন। এর বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে রবিবার ‘এসডিজি অর্জন’ বিষয়ক দক্ষিণ এশীয় স্পিকারদের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বকে যেমন তাক লাগিয়ে দিয়েছে, এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এ দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমাদের সরকারি-বেসরকারি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল উৎস থেকে অধিক পরিমাণে সম্পদের সরবরাহ প্রয়োজন। সুতরাং শুরু থেকেই বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা বা ওডিএ’র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
গণতন্ত্রের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসডিজি বাস্তবায়নে পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি লক্ষ্যকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এর কার্যক্রম মনিটর করার জন্য বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে। নারী-পুরুষের অংশীদারিত্ব, আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার পার্লামেন্টগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি গড়ে তুলতে চাই। এসময় এসডিজি’র পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য স্পিকার ও সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদনের উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
এমডিজি পূরণে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এদেশে অতি-দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। শহর ও গ্রামীণ উভয় অঞ্চলেই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ এবং পয়ঃসেবার মত মৌলিক বিষয়ে অধিকতর সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত ৭ বছর ধরে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর ছিল। গত এক দশকে আমাদের রফতানি আয় ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণেরও কাছাকাছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের মান অনুযায়ী গতবছর বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যমআয়ের জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণে সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ওই অর্জনের পর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। এভাবেই আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। আমাদের এই অগ্রযাত্রায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, উন্নয়ন ও সুস্বাস্থ্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। তামাকজনিত রোগবালাই এবং অসংক্রামক রোগের অব্যাহত প্রকোপ হ্রাসে এ অঞ্চলের ও এর বাইরের সংসদকে এসডিজি-৩-তে বর্ণিত সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে তাদের আরও তৎপর হতে হবে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কনভেনশন এফসিটিসির বাস্তবায়ন। এসডিজি’র ১৭টি উদ্দেশ্য এবং ১৬৯টি লক্ষ্য পূরণই হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পূর্বশর্ত।
এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তামাক একটি বড় বাধা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে তামাকের ব্যবহার মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কায় তামাক-গ্রহণকারীর মোট সংখ্যা প্রায় ৩৮৩ মিলিয়ন। এটা বিশ্বের মোট ১ দশমিক ১ বিলিয়ন তামাক গ্রহণকারীর সংখ্যার প্রায় ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এসব দেশে তামাকজনিত আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। শুধু ভারত ও বাংলাদেশে তামাক গ্রহণজনিত কারণে প্রতিবছর কমপক্ষে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। তবে এফসিটিসি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ধূমপান এবং তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং ২০১৫ সালে সংশ্লিষ্ট বিধি পাশ করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডকে উৎসাহ দিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তামাকের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এটাই এ ধরনের প্রথম পদক্ষেপ। এসময় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে বলেও উল্লেখ করেন।
ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার থিলাঙ্গা সুমাথিপলা, আফগানিস্তানের স্পিকার আব্দুল রউফ ইব্রাহিম, ভুটানের স্পিকার জিগমে জাংপো, মালদ্বীপের স্পিকার আব্দুল্লাহ মাসেহ মোহাম্মদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন প্রমুখ।