'নতুন পণ্যের বাজার খুঁজুন'
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। কারো কাছে হাত পাততে চাই না। তাই নতুন পণ্যের বাজার খুঁজুন। নতুন পণ্য ছড়িয়ে দিন বিশ্বে। কোন দেশে কি সুযোগ আছে তা খুঁজে দেখুন। শনিবার চট্টগ্রামে নির্মিত দেশের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গ্যাস সংকট নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, গ্যাসের সংকট দূর করার উপায় খোঁজা হচ্ছে। ভারতের ত্রিপুরা থেকে গ্যাস এনে সংকট দূর করার আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। শিগগির এ সমস্যারও সমাধান দেখবেন। চট্টগ্রামকে চীনের আদলে 'ওয়ান সিটি টু টাউন' হিসেবে গড়ে তুলতে চান বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইবিআরসি এর নবম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান এবং চট্টগ্রামের কুয়াইশে সিডিএর বাস্তবায়িত সাতটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, এমএ লতিফ এমপি, দিদারুল আলম এমপি, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্রমুখ। কর্মসূচিতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
চিটাগাং চেম্বারের অর্থায়নে নির্মিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে। হাইওয়েকে আট লেন করার কাজ শুরু করা হবে। আমরা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছি। যাতে কর্ণফুলীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের হেয় করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছি আমরা বীরের জাতি। কারো কাছে হাত পাতি না। আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য সময়মতো ট্যাক্স-ভ্যাট দিতে হবে আপনাদের। পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে হবে নিজের দেশেই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করতে আমরা মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করছি। মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত মূল পাইপ লাইন বসানোর দরপত্রে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মহেশখালীতে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছি। শিল্পান্নোয়নের লক্ষ্যে মিরসরাইয়ে একটি এবং আনোয়ারায় দুইটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি।
উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। নিজেদের ভাগ্য নিজেরা পরিবর্তন করছি। বর্তমানে ৭২৯টি পণ্য বিশ্বের ১৯২টি দেশে রফতানি করছি। তাই ১০ বছরের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে। রিজার্ভ পৌঁছেছে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উপরে।
বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে। আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার কমেছে। পাঁচ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। সমুদ্র সম্পদ প্রসঙ্গে বলেন, 'বিশাল এ সম্পদ কাজে লাগাতে হবে। তেল, গ্যাস ও মৎস্য সেক্টরের সম্ভাবনা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসা করতে আসেনি। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রামকে নিজের দ্বিতীয় বাড়ি মনে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোট বেলা থেকেই এমনটি মনে হচ্ছে। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে সব করা হবে। ২০৪১ সালের আগে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
সিডিএর ছয় প্রকল্পও উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
চট্টগ্রামে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ চার হাজার ৯৩৫ কোটি টাকার ছয়টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কুয়াইশ অংশে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সংযোগস্থলে নির্মিত ম্যুরালের সামনে থেকে তিনি প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেন। বোতাম টিপে উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, আউটার রিং রোড, লিঙ্ক রোড (লুপ রোড), কদমতলী ফ্লাইওভার, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও সেখানে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এই ছয় প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে কোনো উন্নয়ন হয় না। তারা ক্ষমতায় থাকলে লুটপাট, দুর্নীতি আর মানিলন্ডারিং করে। তারা এতিমদের টাকা মেরে খায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা ক্ষমতায় এলে জনগণ কিছু পায়। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে বেতন শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ গড়ব। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠা করব। প্রধানমন্ত্রী সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।