পুলিশ ভয়ঙ্কর !

পুলিশ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সব সময় ভয় কাজ করে। যদিও নিরাপত্তার সূত্রে বলা হয় 'বিপদে পুলিশ আপনার বন্ধু'। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ পুলিশকে এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে। এমন কি বিপদে পড়লেও অনেক সময় সাধারণ মানুষ পুলিশের সহযোগিতা চায় না নতুন করে আরও বড় বিপদে পড়ার ভয়ে। পুলিশ নিয়ে সারা বছরই নানান কথা হয়ে থাকে। পক্ষে-বিপক্ষে চলে অনেক যুক্তি-তক্ক। অথচ শেষ পর্যন্ত পুলিশে কিছুতেই ভরসা পায় না সাধারণ মানুষ। যদিও কখনো কখনো পুলিশের অনন্য কাজ দেখে মানুষ প্রশংসা করে। কিন্তু সেসব একেবারেই ব্যতিক্রমি উদাহরণ। গত দুই সপ্তাহ পুলিশ আবার আলোচনার শীর্ষে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ও ডিসিসি আরেকজন কর্মকর্তার উপর নির্যাতন নির্যাতন চালিয়ে পুলিশ আবার আলোচনার শীর্ষে। সেই পুলিশ নিয়ে আজ শনিবার বহুমুখি কথা হচ্ছে। কথাগুলোর কিছুটা এখানে পত্রস্থ করা হলো। প্রথমেই দেখা যাক এই দায়িত্বশীল বাহিনী নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি বলছেন।
পুলিশ নিজেদের দেশের রাজা মনে করছে: মির্জা ফখরুলপুলিশ নিজেদের দেশের রাজা মনে করছে: মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশ 'সিকিউরিটি স্টেটে' পরিণত হয়েছে— এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পুলিশ এখন নিজেদের দেশের 'রাজা' মনে করছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরীক জাগপার যুব সংগঠন যুব জাগপার ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'পুলিশ এখন নিজেদের দেশের রাজা মনে করছে। এখানে কারও কোনো অধিকার নেই। দেশটি সিকিউরিটি স্টেটে পরিণত হয়েছে।' তিনি বলেন, "পুলিশ কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে পিটিয়েছে। এরপর গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সাহাকে পিটিয়েছে। পেটানোর সময় পুলিশ বলেছে, 'মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ।' পুলিশ এখন নিজেদের দেশের রাজা মনে করে।"
‘মাছের রাজা ইলিশ দেশের রাজা পুলিশ—ভয়ানক উক্তি’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ‘মাছের রাজা ইলিশ দেশের রাজা পুলিশ’ বলে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি করা হয়েছে তা একটি ভয়ানক উক্তি। দেশে যে অবস্থা চলছে তা এখনই রুদ্ধ করা না হলে, দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশের সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে, যার পরিণতি ভালো হবে না।
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্নতা বিভাগের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে (৪০) রাজধানীর ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে দেখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বিকাশ চন্দ্র দাস হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি আছেন। শুক্রবার ভোরে পুলিশের বেধড়ক পিটুনিতে মারাত্মক আহত হন বিকাশ। মিজানুর রহমান বলেন, বিকাশ চন্দ্র দাসকে যে ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড, সাংবিধানিক অধিকার এবং নির্যাতন বিরোধী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিকাশকে মারার সময় সেখানে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ।’ বিকাশকে মারার সময় সেখানে উপস্থিত এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। শুক্রবার ভোরে চারটার দিকে পরিচ্ছন্নতার কাজ তদারক করতে বেরিয়ে ছিলেন বিকাশ। এক জায়গায় তদারক শেষে মীর হাজিরবাগ খাল-সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন লোক তাঁকে থামতে বলেন। বিকাশ তাঁদের ছিনতাইকারী ভেবে মোটরসাইকেল ঘোরানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁরা বিকাশকে তাড়া করেন। বিকাশ মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেলে লোকগুলো বিকাশকে ধাওয়া করে ধরে মারধর শুরু করেন। পরে জানা যায়, এঁরা সাদাপোশাকের পুলিশ। এ সময় আশপাশে কর্মরত সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দৌড়ে এসে বিকাশকে তাঁদের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সামনেই তাঁরা বিকাশকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে পেটান এবং বুট দিয়ে পা থেঁতলে দেন। একপর্যায়ে আহত বিকাশকে পুলিশি ভ্যানে তোলা হয়। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পুলিশের ভ্যানটিকে ঘেরাও করেন। পরে পুলিশ বিকাশকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হাসপাতালে বিকাশ চন্দ্র দাসকে আইসিইউতে দেখে আসার পর গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এক ধরনের দায়মুক্তির ভাব গ্রাস করেছে। তাদের কোনো কিছু হবে না, কোনো কিছু স্পর্শ করবে না ভাবছে। ডিএমপি কমিশনার সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন। আমরাও তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই, বিশ্বাস রাখতে চাই।’ মিজানুর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিকাশ চন্দ্র দাস এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী এই দুজনের বেলায় অন্ততপক্ষে দৃষ্টান্ত রাখুন। প্রমাণ করুন আইন সবার জন্য প্রযোজ্য। পুলিশের কেউ অপরাধ করলেও রাষ্ট্র তা সহ্য করবে না তা আমরা দেখতে চাই। বিকাশ চন্দ্র দাসের শারীরিক অবস্থা নিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, তিনি প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। তাঁর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কথাও অস্পষ্ট। ঘাড়ে, মাথার পেছনে, হাঁটুতে চরম আঘাত পেয়েছেন। দুটো পা নাকি তাঁর অবশ মনে হচ্ছে মাঝে মাঝে। তীব্র যন্ত্রণায় ভুগছেন তিনি। এ ঘটনায় ভবিষ্যতে তাঁর কিডনি বা লিভারে প্রভাব ফেলবে কি না তা চিকিৎসকেরা পরে বলতে পারবেন। মিজানুর রহমান পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার ভিকটিমদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা ব্যয়ভার রাষ্ট্রের বহন করা উচিত বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকেও যথাযথ জায়গায় আবেদন, সুপারিশ করা হবে। ল্যাবএইড হাসপাতালের হাসপাতাল সমন্বয়ক ইখতিয়ার আহমেদ বলেন, বিকাশ চন্দ্র দাসের অবস্থা স্থিতিশীল আছে তবে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।
পুলিশের কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে: মনিরুল
সাম্প্রতিক দুইটি আলোচিত ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম। আজ শনিবার ডিএমপি কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
সম্প্রতি পুলিশের হাতে এক ব্যাংক কর্মকর্তা ও এক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কর্মকর্তার হয়রানি হওয়ার ঘটনায় চলমান আলোচনার মধ্যে এ কথা জানালেন মনিরুল। তিনি বলেন, সম্প্রতি দুটি ঘটনা আলোচনায় এসেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি যেন আর সৃষ্টি না হয়, সেজন্য পুলিশের কাউন্সেলিং চলছে। মনিরুল ইসলাম জানান, ব্যাংক কর্মকর্তাকে হয়রানির বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ পাওয়ায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ শিকদারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। অপর ঘটনাটিরও তদন্ত চলছে। দুটি ঘটনায়ই পৃথক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
একটি ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ সদরদফতর। আরেকটি করছে ডিএমপি। তদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ডিএমপির এ মুখপাত্র। পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পুলিশ করছে, এতে গাফেলতি বা পক্ষপাতিত্বের সুযোগ আছে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, পুলিশের তদন্তের ভিত্তিতে কারও কারও ফাঁসিও হয়েছে। এমন আরও অনেক শাস্তিও হয়েছে। কোনো ধরনের গাফেলতি বা পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। এছাড়া, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সাদা পোশাকে অভিযানে যেতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন ডিএমপির এ মুখপাত্র।
পুলিশের এসব কর্মকাণ্ডের পর কয়েকদিন কিছু কিছু কথাবার্তা বলা হয়। তারপর আবার সেসব কথাবার্তা থেমে যায়। সাধারণ মানুষ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চায়, হুমকি বা ভয়ভীতি নয়। পুলিশ যদি বলে-আকাশের যতো তারা পুলিশের ততো ধারা। তাহলে সেই পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষ সহযোগিতা চাইবে কি করে?