আগামী মাস থেকে বাড়ছে রেলের ভাড়া

রেলের ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠনো হয়েছে। প্রস্তাবটির সারসংক্ষেপ সুপারিশ আকারে ‘অতি দ্রুত’ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিলেই আগামী মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে রেলের ভাড়া সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়ানো হবে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রেল সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বলেন, রেলের উন্নয়নের জন্য একটি পদ্ধতি আমরা গ্রহণ করেছি। সে অনুযায়ী প্রতিবছরে কিছু না কিছু ভাড়া বাড়বে। কেননা, যে কোনো পরিবহনের তুলনায় বর্তমানে রেলের ভাড়া অত্যন্ত কম। তাই এবার আমরা বিদ্যমান ভাড়ার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। এটি খুব তাড়াতাড়ি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। আশা করি, ফেব্রুয়ারি থেকে এটি কার্যকর করা হবে।
রেলের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে। রেলের তরফ থেকে মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রস্তাবনা পাঠান হয়েছে, এটিকে সামারাইজ করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য আমরা দ্রুত তাঁর দপ্তরে পাঠাব। তিনি নিশ্চয় অনুমোদন দেবেন, তারপরে এটি কার্যকর করব আমরা। তিনি বলেন, এমনিতে বাস, লঞ্চ বা অন্য কোনো পরিবহনের তুলনায় রেলের ভাড়া অনেক কম, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশে রেলের ভাড়া খুবই কম। তাই যাত্রীদের সহনীয় পর্যায়ে আমরা সামান্য কিছু ভাড়া বাড়াচ্ছি।
রুটিং পদ্ধতিতে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে জানিয়েছে রেলের এডিজি (অপারেশন) হাবিবুর রহমান বলেন, রেলের উন্নয়নে আমরা একটি পদ্ধতি নিয়েছি। প্রতিবছর রেলের যে খরচ বৃদ্ধি পাবে আমরা সেটি আয়ের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে একটি পদ্ধতি রেলের তরফ থেকে অনুমোদিত হয়েছে। এ পদ্ধতি অনুয়ায়ী গত ২০১৩-২০১৪ আর্থিক বছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে রেলের খরচ ৪৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি কর্মচারীদের বেতন, ভাতাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়বৃদ্ধির কারণে বেড়ে গেছে। এই ৪৫ কোটি টাকা আমরা রেলের বিভিন্ন শ্রেণির ভাড়া ও মালের ভাড়া বৃদ্ধি করে তুলতে চাই। সে কারণে এ বছরে সাড়ে ৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবনাসহ একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দিলে ভাড়া বাড়ানো হবে। কত শতাংশ ভাড়া বাড়বে তা প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সাড়ে ৭ শতাংশ প্রস্তাব দিলেও তিনি যদি মনে করেন এর চেয়ে কম বা বেশি বাড়ানো দরকার বা এক্ষুনি ভাড়া বাড়ানোর দরকার নেই তা হলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।
তবে সব শ্রেণিতে ভাড়া একই হারে বাড়বে বলে জানান হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, লোকাল বা কমিউটার ট্রেনের ভাড়া কম, তার ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানো হবে। তেমনি শোভন, শোভন চেয়ার ও প্রথম শ্রেণি বা এসি ক্লাসের ভাড়াও আমরা এই হারে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। এতে করে এসির ভাড়া যেহেতু বেশি তাই এটি বেশি বাড়বে, আবার দ্বিতীয় শ্রেণি বা কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ১০-১৫ টাকা তাই এসব ভাড়া খুব সামান্য বাড়বে। সে কারণে সাধারণ যাত্রীদের ওপর খুব চাপ সৃষ্টি হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে মঙ্গলবার সংসদ ভবনে রেল মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও রেলওয়ের তরফে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, রেল এমনিতে অনেক লোকসানে আছে। আবার অন্য যে কোনো পরিবহন বা পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় আমাদের রেলের ভাড়া খুবই কম। তাই মন্ত্রণালয়ের তরফে ভাড়া বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে আমাদের মত আছে। তবে যাত্রীসেবার মান ঠিক রেখে সাধারণ শ্রেণির ভাড়া যাতে বেশি বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, রেলে বর্তমান যে ভাড়া আছে সেটা খুবই কম। এজন্য ভাড়া বাড়াতে মত দেয়া হয়েছে। তবে এখানে অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে। সবকিছু বিবেচনা করে ভাড়া বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের সেবাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেন তিনি।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, রেলের উন্নয়নের স্বার্থে ভাড়া বাড়ানো প্রয়োজন। কমিটি ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে। আমরা এই প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ২-১ দিনে মধ্যে পাঠিয়ে দেব। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরেই রেলের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হবে বলে জানান রেলমন্ত্রী। তবে এটি ফেব্রুয়ারি বা মার্চের মধ্যে হবে বলেও জানান তিনি।
তবে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। রেলযাত্রীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির এ খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এমনিতে রেলের যাত্রীসেবার মান অতি নিম্ন। তা ছাড়া রেলযাত্রীদের অধিকাংশই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাই ভাড়া বৃদ্ধি হলে অসুবিধায় পড়বেন লাখ লাখ যাত্রী। যাত্রীদের তরফে ভাড়া বৃদ্ধির এ প্রস্তাবকে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান হয়েছে। যদি অনৈতিকভাবে রেল ভাড়া বৃদ্ধি করে তা হলে যাত্রীসাধারণ আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে বলে যাত্রীদের তরফে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০ বছর পর ২০১২ সালে বাংলাদেশে রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন কিলোমিটার প্রতি গড় ভাড়া ২৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩৬ পয়সা। যা অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় অনেক কম।