English Version
আপডেট : ১২ জানুয়ারি, ২০১৬ ২০:১৪

দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে হলেও বাধা দিচ্ছে বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে হলেও বাধা দিচ্ছে বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। উন্নয়নে বিশ্বে রোল মডেল। দেশ এখন উন্নয়নের ঐতিহাসিক দিকসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দল-মত ও বিভক্তির ঊর্ধ্বে উঠে এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বানও জানান তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তাঁর ভাষণে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতি, পৌর নির্বাচন, বিএনপি-জামায়াতের সহিংস রাজনীতি ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, আইনের শাসন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অগ্রগতি, পদ্মা সেতু, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ২০০৮ সালে বলেছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। ইতিমধ্যেই আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ইনশা আল্লাহ ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব।’ বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না। মানুষ শান্তিতে থাকবে, হাসিমুখে জীবন যাপন করবে, তা ওদের সহ্য হয় না। ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াত দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা শুরু করে।’ ওই সময় ২৩১ জন আগুনে পুড়ে নিহত এবং পেট্রলবোমায় ১১৮০ জন আহত হয়। এ ছাড়া দুই হাজার ৯০৩টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, ১৮টি রেলগাড়ি ও আটটি লঞ্চে আগুন দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জনসমর্থন পায়নি। ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে নাকে খত দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।’ বিএনপি-জামাতের ‘অনৈতিক অবরোধ’ কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিচার কাজ চলছে। যারা আপনাদের আপনজনকে কেড়ে নিয়েছে, ক্ষতি করেছে সেই অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দলের নেত্রী ও তার নেতারা মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেওয়া ৩০ লাখÿ শহীদের কটাক্ষ করেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অপমান করেছে। আমি এই ঘৃণ্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। যারা দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করবে তারা ইতিহাসের আসত্মাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কারও কোন কটাক্ষ সহ্য করা হবে না। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে। পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের কোন স্থান এ দেশে হবে না। জনগণকে বলব-এদের বিরুদ্ধে ঐকমত্য গড়ে তুলুন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’

যোগাযোগ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন: প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। মগবাজার-মালিবাগ উড়ালসেতুর নির্মাণকাজ অচিরেই শেষ হবে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে।

পদ্মা সেতু বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। পদ্মা সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১.২% হারে অবদান রাখবে। দারিদ্র্য বিমোচন হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিল্প স্থাপনা বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মাওয়া ও জাজিরাকে ঘিরে আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তুলব। শিবচর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও কেরাণীগঞ্জ জেগে উঠবে নতুন উদ্যমে।

গণমাধ্যম স্বাধীন: শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ছিল বাক-স্বাধীনতা হরণের দেশ, সাংবাদিক নির্যাতনের দেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যম এখন সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলে সরকারের সমালোচনা করতে পারছে। সরকার নতুন ৩২টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা সহ তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছি। সাংবাদিকদের সহায়তায় এ পর্যন্ত তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গ শেখ হাসিনা বলেন, গত সপ্তাহে শান্তিপূর্ণভাবে ২৩৩টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এই নির্বাচন ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। নির্বাচনে আপনারা আপনাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিজয়ী করেছেন, জঙ্গি ও পেট্রল বোমাবাজদের প্রত্যাখ্যান করেছেন, সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। পিডিএফ পড়তে এখানে ক্লিক করুন