English Version
আপডেট : ১২ জানুয়ারি, ২০১৬ ১১:২৩

মাস্টারদা সূর্যসেনের মৃত্যুদিন আজ

মাস্টারদা সূর্যসেনের মৃত্যুদিন আজ

ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুন্ঠনের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মাষ্টারদা সূর্যসেনকে বৃটিশ সরকার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।

১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে মার্চে, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার নোওয়াপাড়া গ্রামে পিতা রাজমণি সেন এবং মাতা শশীবালা সেনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মাস্টারদা সূর্যসেন। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান। পাঁচ বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর, তাঁর বড় কাকা গৌরমণি সেন তাকে লালন-পালন করেন। পরবর্তী সময়ে জ্যাঠাতুতো দাদা চন্দ্রনাথ সেন তাঁর অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন। 

সূর্যসেন প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজে ও পরে পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন। এবং এই কলেজ থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে বিএ পাস করেন। এই কলেজের শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন যুগান্তর দলের সদস্য ছিলেন। তিনি সূর্যসেনকে বিপ্লবী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি গণিতের শিক্ষক হিসেবে ওরিয়েন্টাল স্কুলে যোগ দেন। তখন থেকেই তার নাম হয় ‘মাস্টারদা’।

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ সাল। মাস্টার’দা সূর্য সেন স্থির করেন ইউরোপীয় ক্লাবে প্রীতিলতার নেতৃত্বে হামলা করা হবে। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে সূর্য সেন-এর নির্দেশে প্রীতিলতা ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন। হামলায় ৫৩ জন ইংরেজ হতাহত হয়েছিল। গুলিতে আহত প্রীতিলতা দৈহিকভাবে অত্যাচার থেকে বাঁচতে পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

ট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সুর্য সেনের ফাঁসির মঞ্চ এর সন্মূখভাগের চিত্র।ইংরেজ প্রশাসন সূর্য সেনকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরার জন্য সর্বাত্নক চেষ্টা অব্যাহত রাখে। সূর্য সেন আত্মগোপন করে ছিলেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী রাতে সেখানে এক বৈঠকে ছিলেন কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, মণি দত্ত, ব্রজেন সেন আর সুশীল দাসগুপ্ত। ব্রজেন সেনের সহোদর নেত্র সেন সূর্য সেনের উপস্থিতির খবর পুলিশকে জানিয়ে দেয়।রাত প্রায় ১০টার দিকে পুলিশ আর সেনাবাহিনী ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। রাতের অন্ধকারে গুলি বিনিময় করে কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, মণি দত্ত আর সুশীল দাসগুপ্ত পালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু রাত ২টার দিকে অস্ত্রসহ সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেন ধরা পড়েন।

১৯৩৩ সালের মার্চ মাসে বিপ্লবীরা জেল থেকে সূর্য সেনকে মুক্ত করার জ়ন্য কয়েকবার চেষ্টা চালায়। প্রতিবারই তাদের গোপন পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। সূর্য সেনকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মম ভাবে নির্যাতন করে। হাতুড়ি দিয়ে তার দাঁত এবং দেহের হাড় ও ভেঙ্গে দেয়।

জুন ১৯৩৩ এ শুরু হওয়া এ মামলায় কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের প্রত্যক্ষ প্রমান উপস্থাপন করা যায়নি। ১৪ আগষ্ট ১৯৩৩ সালে এই মামলায় সূর্যসেনকে ফাঁসির রায় শোনানো হয়। ট্রাইব্যুনাল সূর্য সেনকে ১২১ ধারা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত করে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেন। ১৪ নভেম্বর ১৯৩৩ সালে হাইকোর্ট স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের দেয়া দন্ড বহাল রাখে।

১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারী মধ্যরাতে এই মহান অকুতোভয় বিপ্লবী ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তার লাশ আত্মীয়দের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি এবং হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী দাহ করা হয়নি। সূর্যসেনের লাশ জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টীমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহ ব্রিটিশ ক্রুজার ‘দি রিনাউন’ এ তুলে বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেয়া হয়।