বহুতল ভবনের ভেতর দিয়ে তৈরি মেট্রোরেল পথ

মেট্রোরেলের শব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হবে। নষ্ট হবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সৌন্দর্য। এসব দাবিতে মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনে আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারণা। এমন পরিস্থিতিতে ইআইএ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনাকালে পরিবেশগত বিভিন্ন বিষয় সামনে আসবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই থাকছে শব্দ, কম্পন ও বায়ুর গুণগত মান। এর মধ্যে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার সময় শব্দ তৈরি হতে পারে। তবে তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া সম্ভব। নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ এজন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে। চীনের চোংগিং শহরে ভবনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে মেট্রোরেল, জাপানের সোহু শহরে একই চিত্র দেখা গেছে। যেখানে বহুতল ভবনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে মেট্রোরেল। চীনের ওই এলাকা ছিল ঘনবসতিপূর্ণ ও পাহাড়ি। ফলে মেট্রোরেল করার জন্য পর্যাপ্ত স্থান ছিল না। ফলে বিভিন্ন বহুতল ভবন ও পাহাড় কেটে মেট্রোরেলের রুট তৈরি করা হয়। এতে ট্রেন চলাচলে স্থানীয়দের শব্দ দূষণ ও কম্পনের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

ঢাকা শহরেও মেট্রোরেল নির্মাণকালে প্রকল্প এলাকায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চার ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে থাকছে ২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে চলা, শব্দের মাত্রা জাপানি আদর্শ মান তথা ৮৫ ডেসিবলের মধ্যে রাখা ও কম শব্দ উৎপন্ন হয় এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা। পাশাপাশি নির্মাণ এলাকার চারপাশে শব্দ প্রতিবন্ধক (ব্যারিয়ার) ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে। মেট্রোরেলের শব্দদূষণ নিয়ে চিন্তিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, মেট্রোরেলের রুটটি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্য দিয়ে যায়, তবে গোটা ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চারুকলা, টিএসসি ও দোয়েল চত্বর এলাকা। মেট্রোরেলের শব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও দোয়েল চত্বরের পাশে বিজ্ঞান লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা তাদের। তবে এ ধারণা সঠিক নয় বলে মনে করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনকালে সম্ভাব্য সব ধরনের দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এজন্য ইআইএতে বেশকিছু সুপারিশও রয়েছে। যেমন— সোজা পথে মেট্রোরেলের গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার হলেও বাঁক নেয়া জায়গায় তা ২০০ মিটার পর্যন্ত নামিয়ে আনা হবে। উন্নত প্রযুক্তির শব্দহীন ট্র্যাক ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ট্র্যাকের দুই পাশে শব্দ প্রতিবন্ধক ব্যবহার করা হবে। অনলাইনে দেখা যায়, মোশাররফ হোসেন নামের একজন জাপানের ভবনের ভেতর দিয়ে চলা মেট্রো রেলের ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেছেন, 'জাপানের ছেলে মেয়েরা কি রাইতে ঘুমায় না, আবার পড়ালেখাও করে না? তাদের দেখি বাসার মধ্য দিয়ে মেট্রো লাইন। আমাদের দেশের মেট্রো বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জাপানের অনেক কিছু শেখার আছে। সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ। দেশের সকল মেট্রো বিশেষজ্ঞদের (ঢাবি) একটু জাপান ভ্রমণ করায়ে আনার। তাঁরা নিজ চক্ষে দেখে আসুক বাসার মধ্যে দিয়ে মেট্রো গেলেও শব্দ হয় না বা বিল্ডিং কেঁপে ভুমিকম্প হয় না।' ইউনিভার্সিটি অফ গ্ল্যাসগো'র পিএইচডি গবেষক নিয়াজ মোরশেদ চৌধুরী তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, 'এই ট্রেনের কারণে কিন্তু ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের ছাত্রদের পড়ালেখায় সমস্যা হয়েছে বলে কখনও দাবি ওঠে নি। ছবিতে (নিচের ছবি) পাশেই F অক্ষর দিয়ে চিহ্নত করা যে বিল্ডিংটা দেখছেন, ওটা সায়েন্স গ্যালারি। ওখানে সব সময় এক্সিবিশন চলতে থাকে। ট্রেনটা কিন্তু ওটারও উপর দিয়ে গিয়েছে। তাতে এক্সিবিশনেরও কোন সমস্যা কখনও হয় নি। C অক্ষর দিয়ে চিহ্নিত করা বিল্ডিংটা জিম। আমি নিজে জিমের সদস্য ছিলাম এবং দেখেছি ওখানেও সমস্যা হয় না। বরং স্টেশন কাছে থাকায়, D দিয়ে চিহ্নিত রাস্তার উপর একটা দৃষ্টিনন্দন সেতু রয়েছে যা ধরে দ্রুত ট্রেনে চাপা যায়।'

মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মো. মোফাজ্জেল হোসেন জানান, মেট্রোরেলের পরিবেশগত প্রভাবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দদূষণ। খামারবাড়ি ও শাহবাগে তিনটি হাসপাতাল আছে মেট্রোরেলের পাশে। তাই ইআইএতে এ বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া মেট্রোরেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যাবে। তাই শিক্ষার পরিবেশকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যথাসম্ভব কম প্রভাবিত করেই এটি নির্মাণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের এজন্য চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই বলেও তিনি জানান।