ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শেষ : কাল আখেরী মুনাজাত

আল্লাহু আল্লাহু ধ্বনি আর জিকির আজগারে মশগুল বিশ্ব ইজতেমায় উপস্থিত লাখো মুসল্লীর এবাদত-বন্দেগীর মধ্যে অতিবাহিত হলো শনিবার দ্বিতীয় দিন। আগামীকাল রোববার প্রথম প্রহরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে আজ শনিবার থেকেই মুসল্লীরা দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন। প্রতিবারের মতো এবারও রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবন্দসহ সরকারি বেসরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ আখেরী মুনাজাতে অংশ গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতে আশপাশের এলাকা থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মানুষসহ প্রায় ৩০ লাখ মুসল্লী অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মুসল্লীদের মুনাজাতে অংশ গ্রহন করার সুবিধার্থে ঢাকার উত্তরা-আজমপুর, টঙ্গি রেলওয়ে স্টেশন, কামারপাড়াসহ আশ-পাশের এলকায় মাইক সংযোগ প্রদান করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে। ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে শনিবার জিকির আজগার ও তাবলীগ মুরব্বীদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। আল্লাহুম্মা আমীন আল্লাহু ছুম্মা আমীন ধ্বনি আর জিকির আজগারে তুরাগ নদের গোটা এলাকা যেন এক পুণ্যময় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদগণ ইসলামের আমল এবং জীবন-জীবিকা নিয়ে ধমীর্য় পবিত্র গ্রন্থ কুরআন শরিফ ও হাদিসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। ইজতেমা ময়দানে তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীগণ সুবিশাল চটের প্যান্ডেলের নিচে অবস্থানরত দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লীর উদ্দেশ্যে তাবলিগের ছয় উসূল (৬টি মৌলিক বিষয়) যথা কালিমা (ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপন),নামাজ,ইলম ও জিকির (দ্বীনি শিক্ষা ও আল্লাহকে সর্বক্ষণ স্মরণ করা), ইকরামুল মুসলিমিন (মুসলমানদের প্রতি সদাচারণ),তাসহিয়ে নিয়ত (শুদ্ধ নিয়ত) এবং তাবলিগ (দ্বীনের প্রচার) সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। মুরুব্বীদের বয়ান চলাকালে ময়দানে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। বাংলা, ইংরেজী, আরবী,উদু, ফার্সি ভাষায় অনুবাদ ও তরজমা করা হয়। একই সাথে এসব বয়ান ইজতেমায় আগত বিভিন্ন ভাষা ভাষীদের পৃথক পৃথক ভাষায় তরজমা করে শুনানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, আরব-আমিরাত, কাতার, মিশর, জর্দান, আলজেরিয়া, ওমান, ইয়েমেন, সুদান, প্যালেস্টাইন, তিউনিশিয়া, বাহরাইন, ফ্রান্স, কুয়েত, সোমালিয়া, কেনিয়া, জার্মান, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকা, ইরাক, ইরানসহ মোট অর্ধ শতাধিক দেশের প্রায় ৭ হাজার মুসুল্লী শনিবার পর্যন্ত ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে ইজতেমা কর্তৃপক্ষ জানান। আজ বাদ আসর বর ও কনের যৌতুকবিহীন বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। বিবাহ শেষে খেজুর-খোরমা দিয়ে মুসল্লীদের আপ্যায়ন করা হবে। বিবাহ শেষে তাদের সুখী জীবন কামনা করে দোয়া করা হয়। উল্লেখ্য, দিন দিন ইজতেমায় মুসল্লীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থান সংকুলান না হওয়া ও মুসল্লীদের যাতায়াতে যানবাহন চলাচলে চাপ কমাতে গত ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীর তুরাগ তীরে দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারও চার দিন বিরতি দিয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আগামী ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বীরা জানিয়েছেন। ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর আগে ১৯৬৬ সালে টঙ্গির পাগার নামক স্থানে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র হজের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় জমায়েতে বিশ্বের ইসলামী চিন্তাবিদগণ ইসলামের বিভিন্ন দিকে নিয়ে আলোচনা করেন।