বিশ্ব ইজতেমায় জুমার নামাজে বিশ্ব শান্তি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা

তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে জুমার নামাজে বিশ্ব শান্তি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে মুনাজাত করা হয়। ইজতেমা ময়দানে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেছেন দেশ বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজে অংশ নিতে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে পুরো বিশ্ব ইজতেমা এলাকা এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জুম্মার নামাজে ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের। এতে দেশ ও বিদেশের হাজার হাজার মুসল্লি ছাড়াও ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশ এলাকার লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জুমার নামাজে অংশ নেন। ইজতেমা ময়দানে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা সড়ক ও মহাসড়ক ও আশ-পাশের অলিগলিতে বসে জুমার নামাজে শরিক হন। শুক্রবার ফজরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার দুই দফায় অনুষ্ঠিত প্রথম পর্ব। ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে দুদফায় বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। জুমার নামাজের পর বিশ্ব ইজতেমায় বাদ আছর বয়ান করছেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ জোয়াহের, বাদ মাগরিব বয়ান করবেন দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ। মুসল্লিদের সুবিধার্থে তা বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করা হয়। দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপে আজ বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান উর্দুতে আম বয়ান করেন। শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জুম্মার নামাজ আদায় করেন মক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ্ব আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ, জনপ্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দসহ হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। আগামী ১০ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম ধাপ। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বিরা পর্যায়ক্রমে ঈমান, আখলাক ও দ্বীন ইসলাম এবং মানব কল্যাণের ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমলের ওপর বয়ান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস.এম আলম জানান, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকান্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের কাজের সমন্বয় করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ বাসসকে জানান, ১৫ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা দিচ্ছে এবারের ইজতেমায়। মাঠের প্রবেশ মুখে সার্চ টাওয়ার বসিয়ে সিসি টিভির মাধ্যমে পুরো ইজতেমা মাঠ মনিটরিং করছে পুলিশ প্রশাসন। বিদেশিদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় ১০ থেকে ১২ হাজার মুসল্লি যোগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ভিসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যর মুসল্লি বেশি। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপের ইজতেমা শেষ হবে। চার দিন বিরতির পর ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে। আগামী ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে দুই ধাপের বিশ্ব ইজতেমা। ১৯৬৭ সাল থেকে তাবলীগ জামাতের এই বিশ্ব ইজতেমা তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর আগে ১৯৬৬ সালে টঙ্গির পাগার নামক স্থানে তাবলীগ জামাতের এই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহনকারী ৩ জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।