English Version
আপডেট : ৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০৯:২৩

শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় সৌদি আরব

নিজস্ব প্রতিবেদক
শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় সৌদি আরব

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা এমন অবস্থানে যেতে চাই যাতে কেউ আর আমাদের অবহেলা না করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। এই মহান উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে, আমরা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত এবং একটি মর্যাদা সম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যাতে কেউ আমাদেরকে দরিদ্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করে অবহেলা করতে না পারে। তিনি বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, আমরা চাই এই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র মুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। আর কেউ যেন আমাদের অবহেলা দেখাতে না পারে। আমার মনে হয়, তা আর কেউ দেখাবে না, কারণ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সে শিক্ষা তারা পেয়ে গেছে। তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এ জন্য যে, যখন একট মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তারা (বিশ্ব ব্যাংক) টাকা প্রত্যাহার করে নিল এবং আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিলাম সে সময় জনগণের বিপুল সাড়া পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২০ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু কৃষি জাতীয় পুরস্কার তহবিল বোর্ড অব ট্রাষ্টিজ এর সভাপতি এবং কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক। ৩২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২০ প্রদান করা হয়। ৫টি স্বর্ন, ৯টি রৌপ্য এবং ১৮টি ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’ইতোমধেই বাংলাদেশকে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আমরা এই অবস্থায় থাকতে চাইনা। আমরা যুদ্ধ জয়ী জাতি, আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতেই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই। আমি মনে করি, সে শক্তি আমাদের রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের জনগণ ও বিজ্ঞানীরা অনেক বেশি মেধা সম্পন্ন। প্রধানমন্ত্রী দেশের যুব সমাজকে চাকরীর পেছনে না ছুটে সরকারী সহযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থানমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। যেখানে জমি পাবে তাতে আবাদ করতে হবে। এ কাজে দেশের যুব সমাজতে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, তাদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে তারা যেন উদ্যাক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ নিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সাথে মিলে তারা কর্মসংস্থান ব্যবস্থা গড়ে তুলে নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,দেশে ১শটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, ২৪টির জন্য ইতোমধ্যে জায়গা দেখা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি চাই, এসব অঞ্চলে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসবেন। তখন আর বাংলাদেশ গরিব থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করতে জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার তহবিল’ গঠন করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ঘাতকদের হাতে জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ক্ষমতাসীনরা জাতির পিতার এসব উদ্যোগকে বার বার ব্যাহত করে। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা তা পুনঃপ্রবর্তন করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত সাত বছরে ভর্তুকি বাবদ মোট ৫১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণের জন্য বিগত সাত বছরে প্রণোদনা ও কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি হিসেবে ৪৭৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। চলমান ২০১৬-২০২০ মেয়াদে ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্নপদক প্রাপ্তরা হচ্ছেন- ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট গাজীপুর (ইআরআরআই), মোসাম্মৎ নুরুন্নাহার বেগম, মো.আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার, নিভা রাণী বিশ্বাস এবং শক্তি কীর্তনিয়া। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, উদ্বৃত্ত ফসল প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করে আমরা একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। এতে কৃষকও তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, সারাবিশ্বে এখন অর্গানিক খাদ্যের বিশেষ চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমরা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারি। কারণ, অর্গানিক খাদ্যের দাম রাসায়নিক সার দিয়ে উৎপাদিত খাদ্যের দামের চাইতে অনেক বেশি। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহজশর্তে ঋণ নিয়ে মসল্লা চাষের মাধ্যমে নিজেদের এবং দেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার আহবান জানান। কৃষি উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ একটি রোল মডেলে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) সম্প্রতি আমাদের প্রচলিত ‘ভাসমান সবজি চাষ পদ্ধতি’কে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী চাষ পদ্ধতির স্বীকৃতি (ওয়াল্ড হেরিটেজ) দিয়েছে। কিন্তুু টুঙ্গিপাড়া এবং কোটালিপাড়ায় এই চাষ পদ্ধতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাগসই কৃষিজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সেগুলো কৃষকের মাঝে হস্তান্তর, উপকরণ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে কৃষিকে একটি লাভজনক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি বিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে। আমাদের বিজ্ঞানীরা পাটের জীন রহস্য এবং কয়েকটি ক্ষতিকারক ছত্রাকের জীন রহস্য আবিস্কার করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞানীদের আরো নতুন ফসলের জাত ও চাষ পদ্ধতি আবিষ্কারের গবেষণা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।