English Version
আপডেট : ৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ১০:২৯

নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল

নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল
ফাইল ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধের আপিল মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ সকালে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে এই রায় দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর নিজামীর আপিলের ওপর দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক প্রমুখ। নিজামীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির। এরপর আপিল বিভাগ রায় ঘোষণার তারিখ ৬ জানুয়ারি ধার্য করেন।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার শুরু করেন। ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর এই মামলার রায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, একাত্তরে নিজামী ছিলেন জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি। ছাত্রসংঘই পরে আলবদর বাহিনীতে পরিণত হয়, আর গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীই মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে বুদ্ধিজীবী নিধন চালায়।  এটা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়, স্বাধীনতার সক্রিয় বিরোধিতাকারী এমন এক ব্যক্তিকে এই রাষ্ট্রের মন্ত্রী করা হয়েছিল। তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা ছিল তৎকালীন সরকারের গুরুতর ভুল এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা দুই লাখ নারীর গালে সরাসরি চপেটাঘাত। এ ধরনের লজ্জাজনক কাজ গোটা জাতির জন্য অবমাননাকর। উল্লেখ্য যে, নিজামী ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আপিলের শুনানি শুরু হয়। ১১ কার্যদিবস শুনানি শেষে ৮ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

আপিলের রায়ে বলা হয়, যে আট অভিযোগে তিনি ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, তার মধ্যে ১, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তিনি খালাস পেয়েছেন। আর ২, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তার দণ্ড বহাল রয়েছে।

এর মধ্যে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে পাবনার বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ; পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে আপল বিভাগ। ট্রাইব্যুনালের রায়ে ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে আটক, নির্যাতন, হত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার চারটি অভিযোগে নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালত প্রথম দুটিতে খালাস দিয়ে পরের দুটিতে সাজা বহাল রেখেছে।৪ নম্বর অভিযোগে পাবনার করমজা গ্রামে নয়জনকে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড হলেও আপিলে তিনি খালাস পেয়েছেন।

নিজামীর আপিলের রায়টি জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পঞ্চম রায়। অপর চারটি রায় হয়েছে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, দুই সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এঁদের মধ্যে রায়ে ফাঁসি বহাল থাকায় মুজাহিদ, কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার দণ্ড কার্যকর হয়েছে। সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে।