দুই প্রধান দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। ফলে ৫ জানুয়ারি মূলত বিএনপিকে মাঠেই নামতে দিতে চাইবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আবার বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরণের চেষ্টা করা হবে ওইদিন মাঠে নামার। তার আভাস টেরও পাওয়া যাচ্ছে। এবার অবশ্য শুনা যাচ্ছিলো ৫ জানুয়ারি বিএনপি কোন কর্মসূচি দেবে না। কিন্তু নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হলো ৫ জানুয়ারি শুধু ঢাকা নয় বরং দেশজুড়েই তারা কর্মসূচি পালন করবে। এনিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি বলেছিলেন একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ দেশজুড়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। শনিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তারা আশা করছেন, অনুমতি পাওয়ার পাশাপাশি জনসভাকে সফল করে সরকার সহযোগিতা করবে। ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের জেলা কমিটিগুলোকেও এই কর্মসূচি পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আর বিলম্ব না করে আলোচনায় বসতে হবে। না হলে যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাতে জঙ্গিবাদ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিএনপি সমাবেশ করবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনা ছিল। তবে ফখরুলের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ নিয়ে আর ধোঁয়াশা রইলো না।
মূলত ফখরুলের এই ঘোষণার পরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়া দিতে থাকেন। প্রথমেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি। তাতে বলা হয়- শনিবার আওয়ামী লীগের এক সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন দশম সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তির দিন ৫ জানুয়ারি কর্মসূচি থাকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও।গত বছরও এই দিনটি ‘গণতন্ত্র রক্ষার দিন’ হিসেবে পালন করে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনে বিএনপি ২০১৫ সালে কর্মসূচি দিলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সরকার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিলে খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকেন। তিন মাসের ঐ সহিংস অবরোধ কর্মসূচীতে দেড়শতাধিক মানুষ মারা যায়। বিএনপি এবারও দিনটিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়েছে বলে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান দলটির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাছান মাহমুদ বলেন “আমাদেরও কর্মসূচি থাকবে। তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
এসব ঘটনার মধ্যেই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশ যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের সমাবেশের অনুমতি না দেয়, তাহলে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় সমাবেশ হবে।৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কর্মসূচি সফল করতে রোববার দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মাহবুব উল আলম।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য আমরা ৩১ ডিসেম্বর পুলিশের কাছ আবেদন করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ এখনো কিছু জানায়নি। আমরা জানতে পেরেছি পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউকে সমাবেশ করতে দেবে না। তাই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে। এর বাইরে রাজধানীর ১৮টি স্থানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে আনন্দ র্যালি ও সমাবেশ হবে।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না হলে ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশাপাশি বিকল্প স্থান হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কের কথা জানিয়ে মহানগর পুলিশকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, ‘এবার দেখব- আপনারা (সরকার) কতোটুক শান্তির পক্ষে, আপনারা কতটুকু স্বস্তি, কতটুক গণতন্ত্রের পক্ষে। নোংরামী করে অপরাজনীতি দিয়ে নিজেদের চেহারা ঢাকা যাবে না।’
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন- নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা না থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিকে সমাবেশ করতে অনুমতি দেবে। রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়। নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে। আসাদুজ্জামান খান আরো বলেন, যেকোনো ধরনের নিরাপত্তার আশঙ্কা থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখবে এবং ব্যবস্থা নেবে। আগামী ৫ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাকে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সবার স্মরণে আছে, নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে গতবছর দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঘিরে শুরু হয়েছিল সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা। এর এক বছরের মাথায় আবারো দুই দল একই দিনে সমাবেশের ঘোষণা দেয়।