জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুপারিশে অর্থমন্ত্রীর 'না'

বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি করতে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে সুপারিশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু এ বিষয়ে অাশা জাগানিয়া কোন পথ দেখাতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। মন্ত্রীর মতে, জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে আগে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। তারপর সরকার দাম সমন্বয় করবে।
রোববার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ১০ শতাংশ কমানো হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে। আর তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়বে দশমিক ৪ শতাংশ। ভোক্তা চাহিদা বাড়বে দশমিক ৬ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি কমবে দশমিক ২ শতাংশ। তবে সরকারের সঞ্চয় দশমিক ৪ শতাংশ কমবে।
সম্মেলনে উপস্থাপন করা গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, গত ৩০ বছর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ব্যাপক লোকসানের মধ্যে ছিল। দীর্ঘদিন লোকসানে থেকে গত বছর তারা ৫ হাজার ২ কোটি টাকা লাভ করেছে। এবছর বিপিসি’র ১১ হাজার কোটি টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে সিপিডি’র ২০১৫-১৬ প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনায় উঠে আসে, চলতি অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত ৫ মাসে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক না হলেও দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিবন্ধন কমেছে। রাজস্ব আদায় কাঠামো দুর্বল হয়েছে। আইপিও কমে গেছে। এছাড়া বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম কম এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকার পরও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়েনি।
সিপিডি গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের দেশের ভেতরে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার অভিযোগে ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরে বিনিয়োগ করছেন। এভাবে দেশের বাইরে অর্থ চলে গেলে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৫-১৬ প্রথম অন্তর্বতীকালীন পর্যালোচনা’ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পরদিকে, এই বিষয়গুলো নিয়ে একইদিন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন- আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়ের আগে জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে একটি নীতিমালা করার পর সরকার দাম পুনর্নির্ধারণ করবে। তবে কবে নাগাদ তা হতে পারে- সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অর্থমন্ত্রী।
এমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বৈঠকে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জবাবে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে ‘চিন্তা-ভাবনা’ করার কথা জানান। বৈঠকের পর সাংবাদিকরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে মুহিত বলেন, আপাতত বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে না- এটাই সরকারের স্টেটমেন্ট। জ্বালানি তেলের দাম বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট কোনো পলিসি নাই। অন্তত সেটা করার চেষ্টা আমরা করছি। সেটা হলে পরে আমরা আশা করছি, কিছু রিভিশন হবে। এজন্য কত সময় লাগবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সময় বলতে পারব না। কেননা এর সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায় যুক্ত।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার পরও দেশের বাজারে না কমানোয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ইতোমধ্যে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পেরেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি একটা স্টেটমেন্ট নিয়েছি, তাতে কম-বেশি লস কাভার করেছে।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলে ১২২ ডলারে ওঠার পর বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। সেই হারে বর্তমানে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরপার গত দুই বছর ধরে জ্বালানি তেলের দাম কমতে কমতে ৪০ ডলারের নিচে নেমে এলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পুরনো লোকসান কাটাতে দাম অপরিবর্তিত রাখে সরকার।
গতবছর সেপ্টেম্বরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের পরিকল্পনা সরকারের আছে। কিন্তু এর পরপরই পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক অনুষ্ঠানে তেলের দাম না কমানোর পক্ষে মত দেন।এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় তেলের দাম না কমার বিষয়টি সে সময় স্পষ্ট হয়ে যায়। সেপ্টেম্বরে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, আপনারা তো এই দামে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কারও তো অসুবিধা হওয়ার কথা না।