English Version
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১১:৪১

পৌর নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
পৌর নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে

দেশজুড়ে পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। আজ বুধবার সকাল আটটা থেকে দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কোনো বিরতি ছাড়াই এই ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। ভোটে ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ ও বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের মধ্যে।  বিকেল চারটার পর শুরু হবে ভোট গণনা। সবশেষে ফলাফল ঘোষণা। যেসব এলাকায় ভোট হচ্ছে, সেখানে আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর হবে।  স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ইতিহাসে এই প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন সারা দেশে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে। এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় আজকের ভোট নতুন রাজনৈতিক মাত্রা পেয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবারই নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীরা মুখোমুখি হচ্ছেন।  নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২০টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এসব দলের মেয়র পদের প্রার্থী সংখ্যা ৬৬০ জন। বাকি ২৮৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৩৪ পৌরসভায় সাধারণ কাউন্সিলরের দুই হাজার ১৯৩টি পদের জন্য আট হাজার ৭৪৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ৭৩১টি পদের জন্য দুই হাজার ৪৮০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির ৭১ জন প্রার্থী বর্তমানে মেয়র পদে আছেন। এগুলোসহ আওয়ামী লীগের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা ৩০টির বেশি পৌরসভায় সহিংসতা হতে পারে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজশাহী ও রংপুরের পৌরসভাগুলোতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে। 

২৩৪টি পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সব কটিতে, বিএনপি ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ৭৪টি, জাসদ ২১টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৫৭টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি আটটি পৌরসভায় প্রার্থী দিয়েছে। অন্যরা অন্যান্য দলের।  সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—উভয়ই প্রায় সব পৌরসভায় বিজয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ২০০ থেকে ২২০টি পৌরসভায় জেতার কথা বলছে। যদিও পুলিশের গোপন জরিপ বলছে, আওয়ামী লীগ ১২৮ ও বিএনপি ৪৯টিতে জিততে পারে। ৩৮টি পৌরসভায় দুই পক্ষের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।  বিএনপি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না বললেও দলটির পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য আছে। একটি হচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ৮০ শতাংশ পৌরসভায় দলটির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। আরেকটি বক্তব্য হচ্ছে, নির্বাচন যদি অর্ধেক সুষ্ঠু হয়, তাহলে দলটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।  নির্বাচন কেমন হবে—এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে ভোট কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করলেও নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।  নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছিল। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তখন সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার বিএনপি সেনা মোতায়েনের দাবি করলেও এর কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বিনা ভোটে নির্বাচিত: ফেনীর তিনটি পৌরসভার মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। একটিতে আজ নির্বাচন হবে। অন্যদিকে জেলার তিন পৌরসভায় ৪৮টি কাউন্সিলর পদের ৪৪ টিতেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দেশে নির্বাচনের আগেই সাতজন মেয়র ও ১৩৪ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে মনে করা হচ্ছে। পিরোজপুর, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ফেনী, ফেনীর পরশুরাম, নোয়াখালীর চাটখিল ও চাঁদপুরের ছেংগারচরে মেয়র প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তাঁরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত।

অংশ নিচ্ছে ২০টি দল: আজকের নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২০টি দলের মধ্যে আছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনএফ, এনপিপি, পিডিপি, খেলাফত মজলিস, এলডিপি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট।

নির্বাচনেরকেন্দ্র, পদ ও কর্মকর্তা: ২৩৪টি পৌরসভায় মোট ভোটকেন্দ্র তিন হাজার ৫৫৫টি ও ভোটকক্ষ ২১ হাজার ৭১টি। পৌরসভাগুলোতে সাধারণ ওয়ার্ড দুই হাজার ১৯৩টি এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৭৩১টি। প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা মিলিয়ে এবারের নির্বাচন মোট ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

কম ভোট, বেশি ভোট: এবার ২৩৪টি পৌরসভায় মোট ভোটার ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ এবং ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬০ জন। সর্বাধিক ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৫১ জন ভোটার বগুড়া পৌরসভায়। এ ছাড়া এক লাখের বেশি ভোটার আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাভার, দিনাজপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল পৌরসভায়।  সবচেয়ে কম ৬ হাজার ১৫৯ ভোটার রয়েছেন শরিয়তপুরের ভেদরগঞ্জে। এ ছাড়া ১০ হাজারের কম ভোটার রয়েছে বরগুনার বেতাগী (৭৭১১), বগুড়ার ধুনট (৯৯২৮) ও কহালু (৯৮২৮), চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট (৭৫১২), ফরিদুরের নগরকান্দা (৭৫৩৬), যশোরের বাঘারপাড়া (৬২৮৩), নাটোরের নলডাঙ্গা (৭৬২৩) ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় (৬৮৪১)।

২২৯ পৌরসভায় বিজিবি: আজকের পৌর নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ২২৯টি পৌরসভায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরে মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, পাথরঘাটা, রামগতি ও হাতিয়া পৌরসভার প্রতিটিতে এক প্লাটুন করে কোস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করবে।  পরিকল্পনা অনুযায়ী, পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা যেখানে এক লাখের বেশি, সেখানে দুই প্লাটুন বিজিবি, ভোটার সংখ্যা যেখানে এক লাখের কম বা ৫০ হাজারের বেশি সেখানে এক প্লাটুনের বেশি, ভোটার সংখ্যা যেখানে ৫০ হাজারের কম বা ১০ হাজারের বেশি সেখানে এক প্লাটুন এবং ভোটার সংখ্যা যেখানে ১০ হাজারের কম সেখানে এক প্লাটুনের কম বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খসড়া পরিপত্রে বলা হয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচজন অস্ত্রধারী পুলিশ, দুজন আনসার (অস্ত্রসহ) এবং আনসার ও ভিডিপির ১২ সদস্য মিলিয়ে মোট ১৯ সদস্যের বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত একজন অস্ত্রধারী পুলিশসহ ২০ জন দায়িত্ব পালন করবেন।  পরিপত্রে বলা হয়েছে, প্রতিটি পৌরসভায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও ব্যাটলিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত একটি করে ভ্রাম্যমাণ ও অপেক্ষমাণ দল দায়িত্ব পালন করবে। র‍্যাবের একটি করে দল ভ্রাম্যমাণ এবং ৮১টি দল অপেক্ষমাণ বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।