English Version
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০৯:৪২
বেতন কাঠামো নিয়ে অসন্তোষ চরমে

সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের হুমকি শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের হুমকি শিক্ষকদের
শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন

অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে আগে থেকেই অসন্তোষ জানিয়ে আসছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর থেকে এ অসন্তোষ ক্রমেই দানা বাঁধছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সময় বেঁধে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। এক সপ্তাহের মধ্যে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল এবং স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি পূরণ না হলে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের হুমকি দিয়েছেন তারা।

সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের হুমকি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। একই দাবিতে আজ থেকে ছয়দিনের কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এদিন সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

সর্বনিম্ন মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা ধরে গত ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভায় অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন হওয়ার পর থেকেই আন্দোলন করে আসছেন দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের অবনমন ঘটেছে উল্লেখ করে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহালের দাবি জানান তারা। দাবি ওঠে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোরও। এর মধ্যেই গত বুধবার অর্থমন্ত্রী বলেন, যে যা-ই বলুক, বেতন কাঠামো পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নিজেদের মর্যাদার প্রশ্নে এখান থেকে ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। এক সপ্তাহের মধ্যে দাবি না মানলে আগামী ২ জানুয়ারি ফেডারেশনের সভা থেকে একযোগে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেটি কমপ্লিট শাটডাউনের (সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি বন্ধ) মতো কর্মসূচিও হতে পারে।

গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ভবনে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থায় অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর তুলনায় গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের সংখ্যা অর্ধেক কিংবা তারও নিচে নেমে আসবে। গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের থেকে সুপার গ্রেডের দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার কোনো সুযোগ ও নির্দেশনা গেজেটে কিংবা অন্য কোনো পরিপত্রে এ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। এমনকি শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর দেয়া তিনটি আশ্বাসের দুটিই বরখেলাপ হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, প্রজ্ঞাপন জারির আগে ওই বৈঠকে অষ্টম বেতন কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর অনুরূপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য সৃষ্ট সুপার গ্রেডে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন সপ্তম গ্রেডে সম্ভব না হলে অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করারও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।

অর্থমন্ত্রী ক্রমেই শিক্ষকসহ অন্য পেশাজীবীদের আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, ২৪ ডিসেম্বরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতিও চলছে।

জাবিতে ছয়দিনের কর্মবিরতি: বেতনবৈষম্য দূরীকরণ ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে ছয়দিনের কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষক সমিতি। গতকাল জাবি শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের জন্য অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ না হওয়ায় এবং বেতনবৈষম্য দূরীকরণ ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে সোমবার (আজ) থেকে আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত অবিরাম কর্মবিরতি পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য শিক্ষকরা কোনো দায়ভার নেবে না। প্রয়োজনে আগামী ৩ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভা আহ্বান করে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

গেজেট সংশোধনের দাবি চবি শিক্ষক সমিতির: অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেট দ্রুত সংশোধন ও সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি। দাবি আদায় না হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে সমিতি। পাশাপাশি ৩০ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার মাধ্যমে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

গতকাল দুপুরে শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চবি শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী লিখিত বক্তব্যে বলেন, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো-সংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেটে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাছে দেয়া অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসের প্রতিফলন হয়নি। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর তুলনায় গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে। এছাড়া গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্য থেকে সুপার গ্রেডের দ্বিতীয় ধাপে পদোন্নতির কোনো নির্দেশনা এ গেজেটে নেই।

তিনি বলেন, জাতীয় অধ্যাপকদের সিনিয়র সচিবদের পর্যায়ে নামিয়ে এনে অধ্যাপকদের অপমান করা হয়েছে। জাতীয় অধ্যাপকদের পে-রোলে নেয়ার প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঘোষিত অষ্টম বেতন কাঠামোকে বিতর্কিত করা হয়েছে।

সিকৃবিতে সংবাদ সম্মেলন: টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষকরা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে শিক্ষকদের বেতন প্রথম গ্রেড থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। এটি শুধু অর্থসংশ্লিষ্ট নয়, এটি সম্মানেরও বিষয়। গ্রেড অবনমন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অপমান করা হয়েছে।

সিলেট কৃৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. নুর হোসেন মিঞা, সাধারণ সম্পাদক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু, প্রক্টর প্রফেসর ড. আব্দুল বাসেতসহ সব অনুষদের ডিন।