English Version
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০১৭ ১১:৪২

নিউ ইয়র্ক প্রবাসী শম্পা জামান গায়িকা না মক্ষিরানী!

অনলাইন ডেস্ক
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী শম্পা জামান গায়িকা না মক্ষিরানী!

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: নিউ ইয়র্কে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ঘটনায় সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি নারী শম্পা জামান গায়িকা নাকি মক্ষিরানী এ নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে। গত বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত চক্রের ৩০ জনের সঙ্গে তথাকথিত ওই বাংলাদেশি গায়িকা গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রবাসীদের মাঝে নানা ধরণের আলোচনা শুরু হয়।  

নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্নস্থানে বসবাসরত একডজনেরও বেশি প্রবাসী সঙ্গীতশিল্পী ও সংস্কৃতিচর্চাকারীদের সঙ্গে কালের কণ্ঠ'র কথা হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ শিল্পীরাই গ্রেপ্তার হওয়া শম্পা জামানকে একজন গায়িকা বা সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নারাজ। তারা উল্লেখ করে বলেন, শম্পা জামানকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। তাকে যদি আমরা শিল্পী বলি তাহলে প্রকৃত সঙ্গীতশিল্পীদের অবমাননা করা হবে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন নিউ ইয়র্কে হঠাৎ করেই যেন আবির্ভূত হয়েছিলেন শম্পা। অথচ আমরা গত ২০/৩০ বছর ধরে নিউ ইয়র্কে সঙ্গীতচর্চা করে আসছি। অনুষ্ঠানে তার গান পরিবেশনের ঢং দেখে সকল শিল্পীরাই লজ্জা পেত। অনেকেই মাথা নিচু করে রাখতেও বাধ্য হত। কারন খুললাম খুল্লা পোষাকে গানের তালে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশনকালে পুরুষদেরকে নিজের শরীর দেখাতেই ব্যস্ত থাকতেন শম্পা।  

এ বিষয়টি নিয়ে তাকে সতর্ক করে নিউ ইয়র্কের শিল্পী শাহরিন সুলতানা শম্পাকে বলেছিলেন বাঙালি সমাজে শরীর দেখানো এ ধরনের পোষাক চলে না। এর জবাবে শম্পা শাহরিনকে বলেছিলেন এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। এ ব্যাপারে নাক না গলানোই ভালো। সেই থেকে দুই/তিনবছর ধরে দু’জনের কোন কথাবার্তা হয়নি। এ বিষয়টি কালের কন্ঠকে জানান শাহরিন সুলতানা।  

শম্পা জামানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হাসানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, শম্পা জামানকে আমি শিল্পীও বলতে চাইনা এবং তার সম্পর্কে খারাপ খবরও শুনতে চাইনা। তাকে যদি শিল্পী হিসেবে গণ্য করলে শুধু প্রবাসেই নয় বাংলাভাষী গোটা শিল্পী সমাজকে অবমাননা করা হবে। তাকে যেসব অনুষ্ঠানে দেখেছি তার চলাফেরা ও পোষাক পরিধানে অশ্লীলতার প্রতিফলন দেখেছি। যা একজন বাঙালি শিল্পীর হিসেবে থাকার কথা নয়।

তিনি আরও বলেন, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত চক্রের সদস্য হিসেবে শম্পা জামানের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে এদেশের আইনে তার উপোযুক্ত শাস্তি হবে এটাই স্বাভাবিক। এ ধরণের ঘটনায় হঠাৎ করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়না। আইন শৃংখলা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে জড়িতদের অনুসরণ করার পর গ্রেপ্তার করে থাকেন। শম্পা জামানের এ ধরনের ঘটনায় জড়িত ও গ্রেপ্তারে প্রবাসী শিল্পীদের সম্মান ও সুনামের চরম ক্ষতি হয়েছে বলে মনে তিনি করছেন।

নিউ ইয়র্কের প্রখ্যাত তবলা বাদক তপন মোদক কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি একটি অনুষ্ঠানে শম্পা জামান বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি পুরুষদের সঙ্গে অশালীন মেলামেশা করতে দেখেছেন। যা দেখে নিজেই লজ্জিত বোধ করেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, বাঙালি শিল্পীদের জন্য একটি চরম লজ্জাজনক এ ঘটনা।

নিউ ইয়র্ক প্রবাসী আরেক সুপরিচিত সঙ্গীতশিল্পী ডা. নারগিস রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, শম্পা জামানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রবাসী শিল্পীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। লজ্জায় মাথা নত হচ্ছে সকলের। সেখানে সেখানে লোকজন নানা ধরনের প্রশ্নও করছে। জবাব দেওয়ার মত কোন ভাষা নেই আমাদের।

তিনি আরও বলেন, একদিন এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শম্পা তাকে তার গড়িতে উঠতে বলেন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। গাড়িতে উঠেই দেখেন দু’জন পাকিস্তানি যুবক। শম্পা তাদের সঙ্গে উর্দুতেই কথা বলছেন। তিনি বলেন, শম্পার বাসের উপর তলায় কিছু পাকিস্তানি যুবক থাকেন, সেখানে রাতভর তারা গানবাজনার নামে অসামাজিক কার্যকলাপ করে থাকেন তিনি পারেন।

নিউ ইয়র্কের আরেকজন বিখ্যাত তবলা বাদক খুসবু আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, শম্পাকে কোনভাবেই একজন সঙ্গীতশিল্পী বলা যায় না। সে বেশিরভাগ সময়ে ট্রাকে গান গেয়ে থাকেন। কিন্তু ট্রাকে গাইতে গিয়েও নানাভাবে বেতাল ও বেসুরে গান করেন।  

তার গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রসঙ্গে খুসবু বলেন, তার সঙ্গে অনেক অনুষ্ঠানে গিয়েছে তবলা বাজাতে। তার পোষাক পরিধান ছিল একেবারেই অশালীন। পুরুষদেরকে তার নিজের দেহ দেখাতেই পছন্দ করতেন তিনি। খুশবু কখনই বুঝতে পারিনি সে এতবড় একটি জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে যুক্ত। ঘটনা সত্যি হলে তার উপযুক্ত শাস্তি হোক এটাই তিনি আশা করেন। কারন তার এ ঘটনায় শিল্পীদের সমাজে মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়েছে।  

একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ অঙ্গসংঠনের কতিপয় নেতাদের সঙ্গে শম্পা জামানের ছিল বেশ শখ্যতা। সেই সূত্রে তাদের সঙ্গে শম্পা নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আওয়ামী মঞ্চে গান পরিবেশন করে থাকেন। তার গানের চেয়ে খুল্লামখুল্লা পোষাক আর অশ্লীল নৃত্যই পছন্দ করতেন অনেকই।

গত বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত চক্রের ৩০ জনের সঙ্গে  তথাকথিত ওই বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী গ্রেপ্তার হন। ওইদিন নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড এ ব্রাউন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন।  ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের একটি সূত্র জানায়, প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য চুরি করে ক্রেডিট কার্ড উৎপাদন করতো। এরপর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে সেসব কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করতো। আর এই কেনাকাটার মূল কাজটি করতেন কথিত সঙ্গীতশিল্পী শম্পা জামান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দীর্ঘদিন থেকে এই চক্রটিকে অনুসরণ করছিল। হাতে-নাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের দখল থেকে ক্রেডিট কার্ড তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত শম্পা জামান উৎপাদিত ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বেশিরভাগ সময় বারবারি, শ্যানেল, ব্লুমিংডেলস, নর্ডস্ট্রম, অ্যাপল, হোম ডিপো, রেস্টুরেন্ট ডিপোসহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ড স্টোর ও শপিং মলে কেনাকাটা করতেন। নামী-দামী পণ্যের পাশাপাশি তিনি গিফট কার্ড কিনতেন। আর সবকিছুই কিনতেন ‘বস’ মোহাম্মদ রানার নির্দেশনায়। পুলিশ বিভিন্ন সময় পিছু নিয়ে ও ওৎ পেতে থেকে শম্পা জামান ও তার বস রানাসহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।  

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের অপরাধ সংঘটনের বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিভিন্ন ও দীর্ঘ মেয়াদে সাজা হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটানায় তথাকথিত ওই বাংলাদেশি গায়িকা গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে আলোচনার ঝড় বইছে।