English Version
আপডেট : ৪ মার্চ, ২০১৭ ১১:৩১
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

নেপালে গর্ভপাতের পরিমাণ বেশি কেন

অনলাইন ডেস্ক
নেপালে গর্ভপাতের পরিমাণ বেশি কেন

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঘটনা বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই ঘটে তবে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিয়ের আগে গর্ভধারণ নিয়ে সাধারণত নারীকেই পড়তে হয় আরও অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতায়। কারণ সমাজ এমনকি নিজের পরিবারের সদস্যরাও এটি মেনে নিতে চান না। সে কারণেই অনেকে আশ্রয় নেন গর্ভপাতের। কিন্তু তার খুব কমই অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা হয়ে থাকে। বরং অনেক ক্ষেত্রেই অবৈধ ক্লিনিকে অল্পবিদ্যার লোকজনের হাতে গর্ভপাত হয় যা কখনো কখনো মৃত্যুর কারণও হয়। এ ধরনের ঘটনা যেসব দেশে বেশি ঘটে থাকে তার একটি নেপাল।

 

একজন নিজের শ্যালিকার মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, সে গর্ভপাত করায় এমন একটি অবৈধ ক্লিনিকে গিয়েছিল। তারা সেখানে তাকে কিছু ওষুধ দিয়েছিল। সেই ওষুধ সেবনের পরপরই প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হতে শুরু করল। পরিস্থিতির অবনতি দেখে আমরা দ্রুতই তাকে হাসপাতালে নিয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ তাকে নিয়ে গেল মৃত্যুর হিমশীতল দরজায়। তবে এই ব্যক্তি সামাজিক নিগ্রহের ভয়ে নিজের নাম-পরিচয় দেওয়া কিংবা ক্যামেরার সামনে চেহারা দেখাতেও রাজি হলেন না তিনি। নানা সমীক্ষায় উঠে আসা হিসেব অনুযায়ী নেপালে মোট গর্ভধারণের মধ্যে ৫০ শতাংশই অপ্রত্যাশিত আর সে কারণে গর্ভপাতের সংখ্যাও অনেক বেশি।

 

আবার নিরাপদ গর্ভপাতের ব্যবস্থাও সেখানে অপ্রতুল আর সে কারণেই দেশটিতে নিরাপদ গর্ভপাতে সহায়তায় কাজ করছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা। কিন্তু এসব সংস্থাগুলোই এখন তাদের অর্থের বড় অংশ হারানোর পথে। কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একটি আদেশে সাক্ষর করেছেন যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র গর্ভপাতে সহায়তাকারী সংস্থাগুলোকে কোনো অর্থ সাহায্য দিতে পারবে না। এমনকি গর্ভপাত একটি বিকল্প এটি তারা কোনো নারীকে বলতেও পারবে না। আন্তর্জাতিক সংস্থা মেরি স্টোপসের কর্মকর্তা সোফি হোডার বলছেন, বাস্তবতা হলো অর্থ সাহায্য কমিয়ে দেওয়ায় যেসব নারীরা পরিবার পরিকল্পনার সুযোগ পাচ্ছিল না তাদের জীবনের কোনো পর্যায়ে হয়তো গর্ভপাতের প্রয়োজন হতে পারে। নেপালে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছিল পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিগুলোতে, যেগুলো নানা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা পরিচালনা করছে। কিন্তু এ সেবাও এখন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

 

মিস হোডারের মতে, আমাদের ধারণা ৮০ হাজারের মতো নারী এ কারণে গর্ভপাতের সহায়তা নেবে যদিও এ জন্য তারা কেউই দায়ী নয়। যথাযথ স্বাস্থ্য সহায়তা না পাওয়া কারণেই তারা অনিরাপদ সহায়তা গ্রহণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এমন নীতি আখ্যা পেয়েছে গর্ভপাতবিরোধী হিসেবেই। নেপালের মতো দেশগুলোর জন্য মিস্টার ট্রাম্পের গর্ভপাতবিরোধী নীতি আসলে ঝুঁকিতেই ফেলতে পারে নেপালের মতো দরিদ্র দেশের বহু নারীর জীবন। কারণ অর্থের অভাবে সাহায্য সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্যসম্মত ও ঝুঁকি মুক্ত গর্ভপাতের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলে, তাদের দ্বারস্থ হতে হবে অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ ক্লিনিকগুলোর কাছেই। সব মিলিয়ে আরও অনিরাপদ হবে গর্ভপাত।