English Version
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০১৭ ১৭:৩৮

শেষ হলো বাংলাদেশের রুপকথার ইনিংস

অনলাইন ডেস্ক
শেষ হলো বাংলাদেশের রুপকথার ইনিংস

বোলিং দাপট দেখিয়ে লঙ্কানদের যৌক্তিক রানের মধ্যে বেঁধে ফেলেছিল টাইগাররা। এরপর প্রথম ইনিংসে তামিম-সৌম্যর সৌজন্য দুর্দান্ত শুরু। ওপেনিংয়ে ৯৫ রানের জুটি। কিন্তু এরপরই কী যেন হয়ে গেল। দ্বিতীয় দিনের শেষ আধঘণ্টায় ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। ক্ষুব্ধ, হতাশ টিম ম্যানেজম্যান্ট যখন লঙ্কানদের লিডের ভাবনায় অস্থির; তার পরের দিন আজ সকাল থেকেই বদলে গেল দৃশ্যপট। ৯২ রানের জুটি গড়লেন সাকিব-মুশফিক। এরপর তরুণ মোসাদ্দেককে নিয়ে সাকিবের ১৩১ রানের জুটি। যেন রুপকথার গল্প গাঁথা হলো কলম্বোর পি সারা ওভালে। সাকিবে সেঞ্চুরি আর মোসাদ্দেকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৪৬৭ রানে থামল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে লিড হলো ১২৯ রানের।

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে প্রথম ইনিংসে যে বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ তৃতীয় দিনে তার ছিঁটেফোঁটাও দেখা যায়নি। সকালেই হাফ সেঞ্চুরি উপহার দেন অধিনায়ক মুশফিক। ৬৬ বলে ৬ বাউন্ডারিতে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মুশফিক। এটি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফ সেঞ্চুরি। ৮১ বলে ৫২ রান করে লাকমলের বলে মুশি বোল্ড হয়ে গেলে ভাঙে সাকিবের সঙ্গে তার ৯২ রানের দুর্দান্ত এবং সময়োপযোগী জুটি।

অনেকেই তখন বাংলাদেশের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু সাকিব আর অভিষিক্ত মোসাদ্দেক মনে মনে যেন বললেন, এটা তো কেবল শুরু! সমস্ত চাপকে বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়ে অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকেন দুজন। দ্বিতীয় দিন তেড়েফুঁড়ে খেলা সাকিব আজ বেশ ধীরস্থির খেলছিলেন। আর অভিষিক্ত ২১ বছরের মোসাদ্দেককে দেখে কে বলবে; এই ছেলে আজ জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছে! এত পরিণত ব্যাটিং দেখে চোখ কপালে উটতে বাধ্য! পুরস্কারও পেলেন হাতে নাতে। ৮৪ বলে ৬ চার এবং ১ ছক্কায় তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি!

সাকিবের রান তখন ৯১। তিন অংকে পৌঁছতে বেশি সময় নিলেন না তিনি। দিলরুয়ান পেরেরাকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের ৫ম সেঞ্চুরি তুলে নিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ১৪৩ বলের তিন অংকে পৌঁছতে ৯টি বাউন্ডারি হাঁকান বাংলাদেশ ক্রিকেটের 'পোস্টার বয়'। তাকে ঘিরে সমস্ত সমালোচনার জবাব যেন এই সেঞ্চুরি দিয়ে ফেরত দিলেন সাকিব। দলের বিপদ তখন কেটে গেছে। লিড এসে গেছে ৮০ রানের। তখন ১১৬ রান করে দিনেশ সান্দাকানের বলে দিনেশ চান্দিমালের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ততক্ষণে মোসাদ্দেকের সঙ্গে ৭ম উইকেটে ১৩১ রানের জুটি হয়ে গেছে। এই জুটিতেই মূলত বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসায়।

সাকিবের বিদায়ের পর মোসাদ্দেকের সঙ্গী হন আরেক তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই তরুণ মিলে বেশ পরিণত ব্যাটিং করতে থাকেন। দুজনে মিলে ৩৩ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু ৫০ বলে ২ বাউন্ডারিতে ২৪ রান করে লঙ্কান দলনেতা রঙ্গনা হেরাথের বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মিরাজ। রিভিউ নিয়েও সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়নি। পরের বলেই আবারও এলবিডাব্লিউয়ের শিকার হন মুস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টারকে ফিরিয়ে ১০০০ ফার্স্ট ক্লাস উইকেটের মালিক হন হেরাথ। হ্যাটট্রিকের সুযোগ থাকলেও শুভাশিসের দৃঢ়তায় তা হয়নি। শেষ পর্যন্ত হেরাথের বলে উইকেটকিপার ডিকাভিলার হাতে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন মোসাদ্দেক। ১৫৫ বলে ৭ বাউন্ডারি এবং ২ ওভার বাউন্ডারিতে ৭৫ রান করেন এই অভিষিক্ত তরুণ। এর সাথেই শেষ হয় বাংলাদেশের রুপকথার ইনিংস। এখন লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে কম রানে বেঁধে ফেলা।