English Version
আপডেট : ৬ আগস্ট, ২০১৭ ১৮:১১

বৃষ্টিতে বেহাল রাজধানীর রাস্তা

অনলাইন ডেস্ক
বৃষ্টিতে বেহাল রাজধানীর রাস্তা

উন্নয়ন খোঁড়াখুঁড়ি আর কাটাকুটির প্রকোপে এমনিতেই রাজধানীর রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে আবার বৃষ্টি যোগ হওয়ায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছে ঢাকার অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলো।

এসব রাস্তায় চোখ-কান খুলে না চললে মুহূর্তে বিপদে পড়ে যেতে পারেন নগরবাসী। আর জলাবদ্ধতায় পানির নিচে ভাঙাচোরা রাস্তায় উল্টে যাচ্ছে রিকশা, ঘটছে দুর্ঘটনা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় রাস্তার প্রধান সড়কগুলোতে উঠে গেছে বিটুমিন। রাস্তায় ইট, খোয়া, বালু বেরিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন আকারের গর্ত। আর এই গর্তগুলোই হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনার ফাঁদ। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পর্যন্ত রাস্তায় রিং বসানোর জন্য খুঁড়ে এমনিতেই বেহাল অবস্থা হয়ে আছে। তিন লেনের রাস্তার এক লেন দিয়ে যাতায়াত করছে যানবাহন। এর মধ্যে আবার বৃষ্টির কারণে খোঁড়া জায়গাগুলোতে জমেছে পানি। এ ছাড়া রাস্তার মাঝখানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত।

নগরীর প্রায় সড়কই খুঁড়ে রাখা হয়েছে। রাজধানীর যে কোনো অংশে রাস্তা কেটে উন্নয়নমূলক কাজ করতে হলে দুই সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নিতে হয়। সরকারি সংস্থারও রাস্তা কাটার সময় সিটি করপোরেশনকে নির্ধারিত ফি দিতে হয়। ডিএনসিসি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাস্তা খনন ফি হিসেবে পেয়েছে ৩২ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে সংস্থাটি এ খাত থেকে ৫০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ডিএসসিসি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাস্তা খনন ফি হিসেবে পেয়েছে ২৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাস্তা খননের ফি হিসেবে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ২৫ কোটি টাকা। অথচ বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ির পর রোকেয়া সরণির রাস্তাটি মেরামত করেনি ডিএনসিসি। ফলে এ সড়কে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ নিত্যদিনের।

কোন রাস্তা কতটা ভার বহন করতে পারবে তা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব এবং চালকদের অবহেলায় মানা হয় না নিয়ম। তাই নিয়ম না মানায় রাস্তা নির্মাণের পরপরই ভেঙে যায়। অনেক সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের কোনো সড়কের পাঁচ থেকে ১০ টনের ওপরে ভার নেওয়ার সক্ষমতা নেই। কিন্তু বাস্তবে ৪০ টনের যানবাহনও চলাচল করে। রাজধানীর রামপুরা-আমুলিয়া সড়কের ভার বহনের ক্ষমতা পাঁচ টন। সেই রাস্তায় চলে ৩০-৪০ টন পণ্যবাহী লরি-ট্রেইলর। ফলে অল্প দিনেই রাস্তাটি ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মিরপুর-কালশী সড়কে বৃষ্টি হলেই জমে যায় কোমর পরিমাণ পানি। আর টানা বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় রাস্তায় বিটুমিন উঠে গিয়ে পুরো রাস্তাজুড়ে তৈরি হয়েছে গর্ত। এই ভাঙাচোরা সড়কে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চালকদের। মিরপুর থেকে বাড্ডাগামী জাবালে নূর পরিবহনের চালক সানাউল ইসলাম বলেন, এই রাস্তায় গাড়ি চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনিতেই সারা দিন যানজট লেগে থাকে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে যেমন সময় লাগছে, আবার ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে গেছে। গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে টায়ার কেটে যাচ্ছে। রাজধানীর অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ রাস্তায় তৈরি করা হয় বিটুমিন। কংক্রিট দিয়ে রাস্তা তৈরির ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও খরচ বাঁচাতে কর্তৃপক্ষ বার বার ফিরে বিটুমিনের কাছে। আর রাস্তা তৈরি হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় করতে হয় সংস্কার।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাস্তা মজবুত করতে হলে দুটি বিষয় খেয়াল করতে হবে। একটি রাস্তা তৈরির উপাদান পরিমাণ মতো দেওয়া এবং অন্যটি রাস্তায় বহন ক্ষমতার তুলনায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা। আমাদের দেশে অধিকাংশ রাস্তা বিটুমিন দিয়ে তৈরি করা হয়। পানি হলো বিটুমিনের শত্রু। পানি পেলে বিটুমিন অন্য উপাদান থেকে আলাদা হয়ে উঠে যায়। তাই জলাবদ্ধতা হলেই সৃষ্টি হয় গর্তের। কংক্রিটের রাস্তা তৈরির পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, কংক্রিটের রাস্তা তৈরিতে খরচ বেশি পড়লেও ১০-১২ বছরের মধ্যে রাস্তার সংস্কারের জন্য হাত দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তাই হিসাব করলে দেখা যায়, সস্তায় বিটুমিন দিয়ে রাস্তা তৈরি করলেও এর সংস্কার খরচ মিলিয়ে কংক্রিটের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি খরচ পড়ে যায়। আর জনগণের ভোগান্তি তো আছেই। তাই রাজধানীর রাস্তাগুলো কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা উচিত। আর কংক্রিট পানি পেলে আরও মজবুত হয়। তাই রাস্তায় পানি জমে গেলেও ভাঙার কোনো আশঙ্কা থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।