English Version
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১৫:১৮

একুশে ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা

অনলাইন ডেস্ক
একুশে ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান উদযাপনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির পর উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, শহীদ মিনারের বেদী কেন্দ্রীক প্রথম স্তর, শহীদ মিনারের বাইরে দ্বিতীয় স্তর, দোয়েল চত্বর-শাহবাগ-নীলক্ষেত-পলাশী-বকশীবাজার কেন্দ্রীক তৃতীয় স্তর ও এর বাইরে আরেক স্তর। এর মাধ্যমে শহীদ মিনারকে ঘিরে মোট চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

শহীদ মিনারের নিরাপত্তায় পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে মোট আট হাজার পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি আরো বলেন, শ্রদ্ধা জানাতে আসা সবাইকে আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মূল বেদীতে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়া ম্যানুয়ালি ও হ্যান্ডমেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে।

মৎস্যভবন থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকবে এবং দোয়েল চত্বর থেকে পলাশী পর্যন্ত শহীদ মিনারের পুরো এলাকার প্রতি ইঞ্চি সিসিটিভির আওতায় থাকবে বলেও জানান কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি বলেন, সিসিটিভিগুলো কন্ট্রোলরুম থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। কোথাও সমস্যা মনে হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনারের পুরো এলাকা ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। শহীদ মিনারের চারপাশে ডিএমপির ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

৫টি ফুট পেট্রোল টিম শহীদ মিনারের চারপাশে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগত গাড়ি প্রবেশ বন্ধ থাকবে।

মহান একুশের প্রথম প্রহরে ভিভিআইপি ছাড়া সবাই শহীদমিনারে যাবেন পলাশীর মোড় হয়ে। কঠোরভাবে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, কূটনীতিক কোরের সদস্যরা মৎস্যভবন হয়ে দোয়েল চত্বর দিয়ে শহীদ মিনারের পথে যাবেন। এর বাইরে যারা রয়েছেন তাদের সবাইকে পলাশীর মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে হবে। 

গতবছর শহীদ মিনারে প্রবেশে দোয়েল চত্বরে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যরা বিশৃংখলা সৃষ্টি করে এবং পরে জুতা পায়ে শহীদ বেদীতে উঠে পড়ে, সে কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ বছর যেন তেমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। 

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ ভিভিআইপিরা শহীদ মিনারে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চলে গেলেই পলাশীর পথ খুলে দেওয়া হবে। তার আগে এ পথ আটকে রাখা হবে। এ অবস্থায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রতি সব ধরনের সহযোগিতা দিতে সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এ বছর কেউ যাতে শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে উঠে পড়তে না পারে সেজন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

প্রাণের এ উৎসবে কেউ যেন বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে না পারে, সব পর্যায়ের মানুষ যাতে ভাষার শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেন সেজন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দফায় দফায় সমন্বয় সভা করা হয়েছে আর তার ভিত্তিতেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। 

সবার সহযোগিতায় এ উৎসব সুসম্পন্ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপনে কোনো হুমকি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপনকে ঘিরে কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকি নেই। আমরা সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছি। ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াট টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।

দুই বছর আগে ২১ ফেব্রুয়ারির দুইদিন পর অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে জনতে চাইলে তিনি বলেন, বইমেলায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায় এবার তেমনটাই নেওয়া হয়েছে। অতীতে আমাদের যে ব্যর্থতা তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাঙ্ক্ষিত গতিতেই চলছে। দু’একজন আমাদের অভিযানে নিহত হয়েছেন। কয়েকজন গ্রেফতার আছেন। আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।