English Version
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৬:০৪

স্মার্টফোনের নেশায় বুদ,মনে বাসা বাঁধছে নীরব ঘাতক!

অনলাইন ডেস্ক
স্মার্টফোনের নেশায় বুদ,মনে বাসা বাঁধছে নীরব ঘাতক!

ই-বোলা, এইডস-এর মতোই একবিংশ শতকের বিজ্ঞানের সামনে নতুন দুর্লঙ্ঘ চ্যালেঞ্জ ‘নোমোফোবিয়া’। যাঁরা জানেন ভালো।

যাঁরা জানেন না, তাঁদের জন্য নামটিকেই শুধু একটু উল্টেপাল্টে লিখে ফেলাই যথেষ্ট, ‘নো মো বাইল ফো ন ফো বিয়া’। যদিও বিষয়টিকে ‘নো স্মার্ট ফোন ফোবিয়া’ হিসেবেই দেখাচ্ছেন গবেষকেরা। এর ক্ষতিকারক প্রভাবে বড়রা তো ছাড় পাচ্ছেনই না, টিনএজার থেকে শিশুদের মধ্যেও অন্য কোনও বাহ্যিক কারণ ছাড়াই অকালে দেদারসে বাড়ছে ডিপ্রেশন (অবসাদ), উত্কন্ঠার (অ্যাংজাইটি) মতো মানসিক রোগ। যার জেরে বিশ্বের স্থান-কাল ভেদে খুদে থেকে টিনএজারদের মধ্যেও বাড়ছে আত্মহত্যা, আত্মহত্যার চেষ্টার মতো অনভিপ্রেত ঘটনার সংখ্যা। গত মাসে এমআইটি স্লোয়ান ম্যানেজমেন্ট রিভিউ-এ ইতালি এবং ফ্রান্সের দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে গবেষকরা কিছু শিক্ষার্থীকে প্রতি সপ্তাহে একটি দিন স্মার্টফোন ছাড়া রেখে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। দেখা গিয়েছিল, সামগ্রিকভাবে স্মার্টফোন ছাড়া থাকার সময়টিতে তাঁদের মধ্যে মানসিক অবসাদ এবং উৎকণ্ঠা বেড়ে যেত। যে অতিরিক্ত সময় তাঁরা পেয়ে যাচ্ছেন ওই দিন, তাতে তাঁরা কখন কী করবেন সেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে দৈনন্দিন রুটিনেও গোলমাল করছিলেন। কেন এই মানসিক পরিবর্তন? দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক দেখিয়ে দিয়েছেন, স্মার্টফোন সার্ফিং -এ অত্যধিক নেশার দরুণ কিছু স্থায়ী পরিবর্তন আসছে সংশ্লিষ্ট টিনএজারের মস্তিষ্কে। যার জেরে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, এক্সেসিভ ইমপালসিভিটি, ইনসমনিয়ার মতো রোগের কবলে পড়ছেন তাঁরা।   রেডিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা কনফারেন্সে এক স্টাডি রিপোর্টে কোরিয় গবেষকদলের প্রধান হিউং সাক সিও জানিয়েছেন, ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) এর উন্নততর পরীক্ষা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স স্পেকট্রোস্কোপি-র (এমআরএস) সাহায্যে তাঁরা দেখেছেন, স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটে আসক্ত একদল টিনএজারের মস্তিষ্কে গামা অ্যামাইনো বিউটারিক অ্যাসিড (গাবা) এবং গ্লুটামেট -গ্লুটামাইন (জিএলএক্স) এর অনুপাত স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখনীয় পরিমাণে বদলে দেয়, যা মস্তিষ্কে তরঙ্গপ্রবাহের গতিকে স্বাভাবিকের থেকে অনেক ধীর করে দেয়। গাবা দৃষ্টিশক্তি, মোটর নার্ভ নিয়ন্ত্রণ এবং একাধিক মস্তিষ্কজনিত কার্য, যেমন উদ্বেগ, বিচার-বিবেচনার সঠিক ক্রিয়াশীলতার জন্যে দায়ী। কোরিয় গবেষকদের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, স্মার্টফোনের নেশা না থাকা স্বাভাবিক টিনএজারের মস্তিষ্কের অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্সে গাবা এবং জিএলএক্স এর অনুপাত যা থাকে, নোমোফোবিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে তা থাকে কয়েকগুণ বেশি। বাড়তে থাকে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ। গাবার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ে ঝিমুনি, স্নায়ুবৈকল্য। একই সঙ্গে, গাবা ও ক্রিয়াটিন অনুপাত এবং গাবা ও গ্লুটামেট অনুপাতও স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যাওয়ায় শরীরে এসে ভিড় করে অনভিপ্রেত একাধিক উপসর্গ। গবেষকদলের প্রধান হিউং সাক সিও জানিয়েছেন, তাঁদের গবেষণা এই বিষয়ে পথিকৃত হলেও ভবিষ্যতে আরও বড় সংখ্যক নমুনার উপর পরীক্ষা চালালে সঠিক ভাবে জানা যাবে, আদতে কতটা ক্ষতি করছে স্মার্টফোনের নেশা। সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া