English Version
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০২:০০

“সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে পরিপূর্ণ শিক্ষা”র অঙ্গীকার নিয়ে মামস্-এম এ আউয়াল মডেল স্কুল

আনোয়ার হোসাইন সোহেল
নিজস্ব প্রতিবেদক
“সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে পরিপূর্ণ শিক্ষা”র অঙ্গীকার নিয়ে মামস্-এম এ আউয়াল মডেল স্কুল

ঢাকা:  বর্তমান বিশ্বের মানচিত্রে সগৌরব আসনে অধিষ্ঠিত একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাম বাংলাদেশ। ৩০ লক্ষ শহীদের এক সাগর তাজা রক্ত আর লক্ষ মা-বোনের সভ্রম হারানোর বিনিময়ে কেনা পরমাকাঙ্খিত আমাদের এ স্বাধীনতা যা বিশ্বের ইতিহাসে মাতৃভূমির জন্য আত্মত্যাগের এক গৌরবোজ্জল অনন্য দৃষ্টান্ত। ১৯৭১ সালে সেদিনে আধুনিক মরণাস্ত্রে  সুসজ্জিত দুর্ধর্ষ ও হিংস্র পাক হায়েনা সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে গ্রাম বাংলার নিরস্ত্র জনগণের যে মরণপণ দুর্বার সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছিল। এ বিশ্বে তার ও কোন তুলনা নেই।যেদিন এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবনকে মরণের হাতে সমর্পণ করে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে দুর্জয় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে বাংলার মানুষ তা সশ্রদ্ধচিত্তে চিরকাল স্মরণে রেখে নিজেদেরকে গৌরবান্বিত মনে করবে। ‘৭১এর মুক্তি সেনাদের মধ্যে অধিকাংশ ছিল মাতৃভূমির প্রেমে পাগল ছাত্র, জনতা, কৃষক, শ্রমিক। কালের অমোঘ প্রবাহে সেদিনের তরুণ প্রাণোচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের এক এক জন আজ বয়সের ভারে নূজ্ব, শরীরের চামড়ায় ভাঁজ পড়া শুভ্র কেশ মন্ডিত হতোদ্দম এক বৃদ্ধ সৈনিক। তাদেরই একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক, শিক্ষানুরাগী, ও মুক্তিযুদ্ধকালীন ইন্টারমেডিয়েটে পড়ুয়া তরুণ ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল আউয়াল। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকৃত মনোপ্রাণে এ মুক্তিযোদ্ধা তার বর্তমান ষাটোর্ধ্ব বছর বয়সেও দেশের মানুষকে শিক্ষা দানের মাধ্যমে সুনাগরিক ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিজের প্রায় ২ বিঘা জমির উপর “সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে পুরিপূর্ণ শিক্ষা”র দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন এক অত্যাধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মামস্ এম.এ. আউয়াল মডেল স্কুল’। এখনো তিনি নিজেকে উজাড় করে উদয়াস্ত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন-দেশের মানুষের মাঝে শিক্ষার বিস্তারের জন্য।

মো.আবদুল আউয়াল বীর মুক্তিযোদ্ধা এর পরিচিতিঃ তিনি ঢাকা জেলাস্থ হালে তুরাগ থানাধীন অজ গ্রাম কামারপাড়ায় ইংরেজি ১৯৫৩ সালের ১৫ই জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।পিতা-মরহুম ইয়াছিন মিয়া ও মাতা-মরহুমা ছিফরজান বিবি’র ৪ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে মো.আবদুল আউয়াল ৪র্থ।

ছাত্র জীবন: ষাটের দশকে শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত টঙ্গীর পাদদেশে অবস্থিত শিক্ষাহীন নানাবিধ সামাজিক অনাচার আর কদাচার পূর্ণ কামারপাড়া গ্রামেই তাঁর ছাত্রজীবন শুরু। ছাত্রাবস্থায়ই কামারপাড়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অসামাজিক কাজকর্ম সহ সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় ঘরে ঘরে স্থানীয় ভাবে তৈরী তাড়ি/মদের আসর বসত। এলাকায় সবধরণের অনৈতিকার প্রচলন থাকলে ও ছিলোনা কোনরূপ শিক্ষার আলো। তৎকালীন সমাজের এহেন দৈন্যাবস্থা নিরসনের জন্য ছাত্রাবস্থায়ই এলাকার মানুষের নৈতিকতার উন্নয়নের নিসিত্তে ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য এলাকার সমমনা ছাত্রদের নিয়ে ১৯৬৯ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর ‘হরিরামপুর ছাত্র সংসদ’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী পর্যায়ে সমাজ সংস্কারে এলাকার যুব সমাজ অংশ গ্রহণের স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ প্রকাশ করায় যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করে ‘হরিরামপুর ছাত্র সংসদ’ নাম পরিবর্তন করে ‘হরিরামপুর সাংস্কৃতিক সংসদ’ নাম করণ করা হয়;  এবং তিনি সমাজ উন্নয়নে ব্রতী হন।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে হরিরামপুর সাংস্কৃতিক সংসদের প্রায় সকল নেতৃস্থানীয় সদস্যই ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। এলাকার শিক্ষার আলো প্রজ্বলনের তাগিদে স্বাধীনতা্ত্তোরকালে হরিরামপুর সাংস্কৃতিক সংসদ একক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত করে ‘কামারপাড়া হাই স্কুল’। বর্তমানে যাহা কামারপাড়া স্কুল এণ্ড কলেজ তথা অত্র এলাকার বৃহত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সামাজিকতার এমন পিছুটান ও সমাজ উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে ১৯৬৮ইং সালে তিনি লেটার মার্কসহ টঙ্গী পাইলট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও কৃতিত্বের সঙ্গে বর্তমান বদরে আলম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং  তৎকালীন জিন্নাহ কলেজ বর্তমানে তিতুমীর কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।   

কর্মজীবনঃ

১৯৬৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা সমাপ্তি হওয়ার পরক্ষণেরই টঙ্গী হাই স্কুলের একজন শিক্ষক বি. এড ট্রেনিংয়ে চলে যাওয়ায় তার শুন্য পদে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় গফুর স্যার খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে টঙ্গী হাই স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। বলা যায় তখন থেকেই তাঁর শিক্ষকতায় হাতেখড়ি।তার জীবনে শিক্ষা আর শিক্ষকতার মূল অনুপ্রেরণায় ছিলেন শ্রদ্ধেয় গফুর স্যার। তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে টঙ্গী পাইলট স্কুলে শিক্ষকতা পেশা দিয়েই তার কর্মজীবন শুরু। সমাজ সংস্কার ও উন্নয়ন আর শিক্ষকতা নিয়ে জীবনকে গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সমাজের সংস্কার আর উন্নয়ন করতে গিয়ে “ভিলেজ পলিটিক্স” এর অসহায় শিকার হন। তিনি ১৯৭৮ সালে পিএসসি’র মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সহকারী আনসার এ্যাডজুটেন্ট পদে নিয়োগ নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট অব আনসার পদে পদোন্নতি পেয়ে ৮ম আনসার ব্যাটালিয়ানের কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে চট্টগ্রামের হিলট্রাকসে ১০ নং ও ১২নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে আনসার অ্যাডজুটেন্টের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে পুনরায় পিএসসি’র প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে সাব রেজিষ্ট্রার হিসাবে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামে যোগদান করেন। সে সময় থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলায় অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করে সুদীর্ঘ ২৮ বছরের অবসান ঘটিয়ে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা থেকে সরকারি কর্ম জীবনের ইতি টানেন।  

মামস স্কুলে প্রতিষ্ঠার পটভূমি সর্ম্পকে বলুন।  

আবদুল আউয়ালঃ সত্যি কথা বলতে কি আমার জীবনের দুরন্ত বেলায় জীবনকে বাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম পাক হানাদার মুক্ত একটি স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলার জন্য; এক্ষণে জীবনের এ পড়ন্তবেলায় মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছি মামস্ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ বাংলার সন্তানকে অশিক্ষা ও কুশিক্ষা মুক্ত করে প্রকৃত শিক্ষাদারেন মাধ্যমে আদর্শ মানুষ ও প্রকৃত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলায় একটু অবদান রাখার জন্য। এ প্রসঙ্গে আরো বলতে চাই মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল-কোরআনের প্রথম শব্দ “ইকরা” দ্বারা মানব জাতিকে  শিক্ষার অপরিসীম গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। রাসূল (সাঃ) ‘জ্ঞানার্জনকে প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর জন্য ফরজ’উল্লেখ করে আমাদের জন্য শিক্ষাকে অপরিহার্য করে দিয়েছেন।  এর মাধ্যমে এটা সু-স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, মানব সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই তার মধ্যে মানুষের যোগ্যতা বা মনুষ্যত্বের সর্ববিধ গুণাবলী বিকশিত হয়ে উঠে না; এসব গুণাবলী অনুকূল পরিবেশে মানব সন্তানকে শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। তাই মানব সন্তানকে প্রকৃত অর্থে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার এ মহান উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই “সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে পরিপূর্ণ শিক্ষা” এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন তুরাগ থানার কামারপাড়ায় গড়ে তোলা হয় মামস্ এম এ আউয়াল মডেল স্কুল। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে জ্ঞান, দক্ষতা, নৈতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে প্রকৃত অর্থে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই  এ স্কুলের মূল উদ্দেশ্য। 

শিক্ষার মানউন্নয়নে কি কি করণীয় আছে বলে আপনি মনে করেন?  

আবদুল আউয়ালঃ শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা ও নৈতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে প্রকৃত অর্থে একজন ‘‘মানুষ”। শিক্ষার মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভা ও মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করা সম্ভব। আধুনিক ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে পিছিয়ে পড়াদের কিভাবে একটি শিক্ষিত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্বের দরবারে দাঁড় করানোর যায়। সেই লক্ষ্যে দেশের তরুণ যুব সমাজকে কলম যোদ্ধার ভূমিকায় অবত্তীর্ণ করার লক্ষ্যে আমি সু-শিক্ষাগ্রহণকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। যে কারণে ছাত্রাবস্থা থেকে নিজেকে শিক্ষার সাথে যুক্ত করি। 

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন

আবদুল আউয়ালঃ  আমাদের জীবনে সুযোগ এসেছিল, সে সুযোগ আমরা হাতছাড়া করিনি; আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তরুণ প্রজন্মের কাছে আমাদের একটাই প্রত্যাশা এ স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ণ করা। আমাদের স্বাধীনতার পরেও অনেক দেশ স্বাধীন হয়ে বিশ্বের বুকে নিজেদের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে কিন্তু আমরা এখনো তা পারিনি। আমাদের ব্যর্থতা কোথায় তরুণদেরই তা  খুঁজে বের করে তার সুন্দর সমাধান করতে হবে। তা না হলে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার সুফল পেতে আমরা ব্যর্থ হয়ে যাব। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, তরুণ প্রজন্ম মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। তারা সু-শিক্ষার মাধ্যমে সুখী সম্মৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত এবং জঙ্গীবাদমুক্ত একটি উন্নত জাতি আমাদের উপহার দিবে।

আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আবদুল আউয়ালঃ দ্য ঢাকা পোস্টকেও অনেক অনেক মোবারকবাদ। আমি আশাকরি দেশের উন্নয়নে সর্বোপরি দেশ গড়ার কাজে ঢাকা পোস্ট নিউজ লেখনীর মাধ্যমে আরো অবদান রাখবে; এবং আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে আরো বেশী অর্থবহ করে তুলতে পারবে।