English Version
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০৯:৪৩

এবার জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা ওআইসির

অনলাইন ডেস্ক
এবার জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা ওআইসির

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে মুসলিম দেশগুলোর বড় সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) জেরুজালেমকে পাল্টা ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে তারা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র এবং পূর্ব জেরুজালেমকে তার রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার তুরস্কের বৃহত্তম নগরী ইস্তাম্বুলে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) এক বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় এ আহ্বান জানানো হয়। জেরুজালেমকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিবাদে এবং এই সম্পর্কে করণীয় নির্ধারণে বিশেষ এই শীর্ষ সম্মেলনের ডাক দেয়া হয়েছিল। ওআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান এই সম্মেলন আহ্বান করেন। বাংলাদেশসহ ৫৭টি মুসলিম প্রধান দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রতিনিধিরা এক দিনের এ সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলন শেষে ইস্তাম্বুল ঘোষণায় বলা হয়, ওআইসি পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করছে। সব রাষ্ট্রকে ফিলিস্তিনকে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে তার অধিকৃত রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানাই। ঘোষণায় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে বাতিল ও আইনগতভাবে অবৈধ বলে মন্তব্য করা হয় এবং বলা হয় ওই ঘোষণায় শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাস মাথাচাড়া দেবে। মুসলিম বিশ্বের নেতাদের যৌথ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক’ উল্লেখ করে ওআইসি পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি শাসনের অবসান ঘটাতে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানায়। ওআইসি জানায়, তারা দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানে বিশ্বাসী।  সভাপতির ভাষণে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ইসরাইল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তিনি বলেন, ইসরাইল দিন দিনই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করছে। এটা থামাতে হবে। তিনি বলেন, ইসরাইল দিন দিন যে আচরণ করছে তাকে অবশ্যই আমরা গ্রহণ করব না। তিনি বলেন, যেসব দেশ আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারকে মূল্যায়ন করে তাদের উচিত জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয়া। তিনি আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আমেরিকাসহ বিশ্ব মানবতাকে হুমকির মুখে ফেলেছেন। ইসরাইলকে দখলদার ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে এরদোগান বলেন, তেল আবিবের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে পুরস্কার দিয়েছেন। যেসব দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাদের প্রশংসা করে এরদোগান বলেন, ট্রাম্পের এই বেআইনি সিদ্ধান্ত একমাত্র ইসরাইল ছাড়া কেউ সমর্থন করে নি। যেসব দেশ মার্কিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নি আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এই বেআইনি, ভুল ও উসকানিমূলক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার আহ্বান জানান। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পেছনে খ্রিস্টান ও ইহুদিবাদী মানসিকতা রয়েছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি। এরদোগানের আগে এক বক্তব্যে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগ্লও ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানান এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের সীমানার নিরীখে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্বকে আহ্বান জানাতে মুসলিম দেশগুলোকে তাগাদা দেন। ১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। পরে তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এটি ইসরায়েলি ভূখণ্ডের অংশ করে নেয়। এর আগে ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধে ইসরাইল জেরুজালেমের পশ্চিমাংশ দখল করেছিল। ফিলিস্তিন পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসাবে দাবি করে আসছে। ইসরাইল পুরো জেরুজালেমকেই তাদের অবিভক্ত রাজধানী বলে মনে করে। কিন্তু জেরুজালেমে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি।  এর আগে গতকাল ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ আল হুথাইমিন মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে মুসলিম বিশ্বকে আহবান জানান। তিনি বলেন, ওআইসি আমেরিকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছে এবং এর নিন্দা জানিয়েছে। এটা একদিকে আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন এবং অন্যদিকে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্বের মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে এই অঞ্চল তথা পুরো বিশ্বে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।  ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ায় নিজেদের ‘অযোগ্য এবং পক্ষপাতদুষ্ট’ হিসেবে প্রমাণ করেছে। শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো ভূমিকা গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, জেরুজালেম সবসময়ই ফিলিস্তিনের রাজধানী ছিল এবং থাকবে।