English Version
আপডেট : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৯:৪১

সৌদি আরবে কেন এত নাটকীয় পরিবর্তন!

অনলাইন ডেস্ক
সৌদি আরবে কেন এত নাটকীয় পরিবর্তন!

সৌদি আরবে গত কয়েক দশক ধরে ধীরগতিতে সামান্য কিছু পরিবর্তন ঘটছে, কিন্তু সম্প্রতি দ্রুত ও নাটকীয় ঘটনা প্রবাহের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সারা দুনিয়ার কৌতূহলী দৃষ্টি এখন ওই দেশটির ওপর। আধুনিকায়ন, নারীদের অধিকার এবং ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান-এর সবই আছে দেশটির কার্যতালিকায়। আর এসব কিছুর কেন্দ্রে আছেন একজন ব্যক্তি-নতুন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

তার নেতৃত্বে চলছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। সমালোচকদের অনেকে বলছেন, নিজের ক্ষমতা আরো কুক্ষিগত করতে বিরোধীদের তিনি নির্মূল করার চেষ্টা করছেন এসব অভিযানের নামে। দেশের ভেতরে তো বটেই, যুবরাজ বিন সালমান এখন চেষ্টা করছেন নিজেকে আরব বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। বিষয়টি নিয়ে বিবিসি বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হঠাৎ করে এখন কেন তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিতে এত কিছু ঘটতে শুরু করেছে? গত কয়েক দিনে নাটকীয় কিছু ঘটনা ঘটে গেল সৌদি আরবে। আগে এসব কারো কল্পনাতেও ছিল না। যেমন বিলাসবহুল হোটেল রাতারাতি পরিণত হলো কারাগারে। আর ধনকুবের রাজকুমাররা হয়ে গেলেন কারাবন্দি। ফলে দেশটিতে বাড়তে লাগল উত্তেজনা, দেশটি জড়িয়ে পড়ছে প্রক্সি যুদ্ধে এবং এত দ্রুত একের পর এক এসব ঘটনা ঘটে চলেছে যে এসব খবরাখবরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাও খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

সৌদি আরবে এত পরিবর্তনের কারণ ও ধরন বুঝতে হলে এর সামান্য পেছনের কিছু ইতিহাসের দিকে ঘুরে তাকাতে হবে।

আজিজ আল সৌদ ১৯০২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন তৃতীয় সৌদি রাজত্ব। ১৯৫৩ সালে তার মৃত্যুর আগে এই রাজত্ব তিনি সম্প্রসারিত করেন পারস্য উপসাগর থেকে লোহিত সাগর এবং ইরাক থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত। এই সৌদি বাদশাহর ছিলেন কয়েক ডজন ছেলেসন্তান। তিনি চাইছিলেন ক্ষমতা একজনের হাত থেকে আরেকজনের হাতে ঘুরতে থাকবে। তখন তারা একেকজন একেক গোষ্ঠীর নেতা হয়ে উঠলেন।

তাদের ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখারও ব্যবস্থা ছিল তখন। এ কারণে বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষমতা তাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই চলে আসছিল দশকের পর দশক। খুব ধীরগতিতে কিছু পরিবর্তনও ঘটছিল। এসবের বেশিরভাগই ছিল স্থিতিশীল এবং কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা আগে থেকেই মোটামুটি অনুমান করা যেত। অর্থাৎ নাটকীয় কিছু তেমন একটা ঘটত না।

সৌদি আরবের এখনকার বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। তার ভাইদের বেশিরভাগই ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে রাজত্ব এখন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরের সময় চলে এসেছে। বাদশাহর ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফ ২০১৫ সালে হলেন নতুন যুবরাজ। ফলে এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, সিংহাসন আল সৌদ রাজপরিবারের ভিন্ন শাখার দিকে প্রবাহিত হতে চলেছে।

অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ বাদশাহ সালমান তখন তার উচ্চাকাক্সক্ষী পুত্রসন্তান সালমানকে তড়িঘড়ি করে ডেপুটি যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা করেন। এর দুই বছরের মধ্যেই মোহাম্মদ বিন নায়েফকে উৎখাত করেন বাদশাহ সালমান। এরপর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়ে ওঠেন তারই ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান। ফলে সিংহাসনের উত্তরাধিকারের প্রথা ভেঙে যায়।

সৌদি আরবে বদলে যেতে শুরু করে সবকিছু। নতুন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান রাতারাতি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের আটক করে জেলে ভরতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন অত্যন্ত বিত্তশালী ব্যবসায়ীরা। এমনকি ন্যাশনাল গার্ডের প্রধানও। সব ক্ষমতা চলে এলো এক ব্যক্তির হাতের মুঠোয়, যা সৌদি রাজপরিবারে কখনো ছিল না।

বিন সালমান ভাবছেন, সৌদি আরবকে এমন একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে, যা তেল ছাড়াও তার বর্তমান প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে টিকে থাকতে পারবে। তিনি আরো চাইলেন সৌদি আরবে নারীরা যাতে গাড়ি চালাতে পারে, এমনকি দাঁড়াতে পারে নির্বাচনেও। তিনি চাইলেন পররাষ্ট্রনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে।

এভাবে তিনি নতুন এক সৌদি আরবের প্রতিশ্রুতি দিতে থাকলেন। যুবরাজের এতসব উদ্যোগের পেছনে রয়েছে বড় ধরনের সব চ্যালেঞ্জ। তার এই ক্ষমতার খেলা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শ্লথ করে দিতে পারে, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন বিনিয়োগকারীরাও। মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে তার যে নীতি সেখানেও রয়েছে সংঘাতের আশঙ্কা।

ইতোমধ্যেই সৌদি আরব বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইরানের সঙ্গে। আর দেশটি তো ইতোমধ্যেই সরাসরি যুদ্ধ করছে ইয়েমেনে। সৌদি আরব এখন কোন দিকে যেতে পারে এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিণতি কী হয় তা দেখার জন্য হয়তো আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে নাটকীয় কিছু যে ঘটবে সেটা নিয়ে হয়তো কারো সন্দেহ নেই।