English Version
আপডেট : ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ১০:৫৮

হঠাৎ কেন ইরানের দিকে ঝুঁকছে সৌদি আরব?

অনলাইন ডেস্ক
হঠাৎ কেন ইরানের দিকে ঝুঁকছে সৌদি আরব?

ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের দ্বন্দ্বটা যেন চিরন্তন। রাজনৈতিক আর মতাদর্শগত বিরোধের জেরে প্রায়ই উত্তপ্ত পরিস্থিতি যায় দেশ দুটির কূটনৈতিক অঙ্গনে। একে অপরের বিরুদ্ধে সব সময়ই দিয়ে আসছে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ।

এছাড়া ইয়েমেনে এক ধরনের প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত আছে সৌদি আরব ও ইরান। সরকারি বাহিনীকে সহায়তা দিয়ে বিদ্রোহী হুতি গেরিলাদের ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে সৌদি বাহিনী। অপরদিকে হুতিদের সহায়তা দিয়ে আসছে ইরানি প্রশাসন।

গত বছরের শুরুর দিকে শিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমরকে সৌদি প্রশাসন মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর থেকে দুই দেশের দ্বন্দ্ব আরো বেড়েছে। ওই ঘটনায় তেহরানে সৌদি দূতাবাস পুড়িয়ে দেয় ক্ষুব্ধ ইরানিরা। এরপর থেকেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আবার চলতি বছরের জুনে কাতারের ওপর সৌদি ব্লকের অবরোধ আরোপের পর দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান। অবরোধ আরোপকারী আরব রাষ্ট্রগুলো কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে দেশটিকে যে কয়টি শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখা যাবে না।

ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের এই যখন অবস্থা, তেমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করতে চাইছে রিয়াদ। শুধু তাই নয়, দুই দেশের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছে সৌদি আরব সরকার।

ইরাকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিম আল-আরাজির বরাত দিয়ে দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল আলগাজের জানিয়েছে, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইরানের সঙ্গে মধ্যস্থতার জন্য ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

রোববার আরাজির বরাত দিয়ে ইরাকের ওই গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সৌদি আরবে আমাদের সফরের সময় তারা আমাদের এই কাজটা করার অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা ইরানকে তা জানিয়েছি। ইরানের পক্ষ থেকেও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। যুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর তারা (সৌদি) ইরাকের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে।’

ইরাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সৌদি-ইরান সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের বিষয়টি এই পুরো অঞ্চলে ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে।’

শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরান সফর করেছেন আরাজি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে, এসময় শীর্ষ ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। এর আগে জুলাই মাসে সৌদি আরব সফর করেন এই ইরাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইরানি বার্তাসংস্থা আইএসএনএ আরাজির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা নিরসন চান মোহাম্মদ বিন সালামান। এদিকে ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদর তার ওয়েব সাইটে জানিয়েছেন, রোববার তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাচ্ছেন। গত জুলাইতে সৌদি আরবে এক বিরল সফরে যান সদর। সেখানে তিনি মোহাম্মদ বিন সালমান এবং অন্য সৌদি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

মার্কিনবিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত সদরের প্রচুর অনুসারী আছে বাগদাদ এবং ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় দরিদ্র এলাকাগুলোতে। এছাড়া সারায়া আল-সালাম নামের একটি সশস্ত্র সংগঠনেরও নেতা তিনি। একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবেই দেখা হয় সদরকে। ইরাক সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময়ই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছেন এই নেতা।

রোববার আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় সৌদি-ইরান কূটনৈতিক ইস্যুটিকে ‘উদ্ভট’ বলে আখ্যা দেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদ জাওয়াদ। তিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে যদি সৌদি আরব কাতারি প্রশাসনের সঙ্গে বিবাদে যুক্ত থাকে, তাহলে তারা কেমন করে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে ইরাককে অনুরোধ করতে পারে?’

এই গবেষক আরো বলেন, ‘সৌদি প্রশাসন খুব ভালো করেই জানে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইরানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব আছে ইরাকের। তারা বর্তমানে মূলত ইরান প্রভাবাধীন। সৌদি আরব বরং আরো নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কুয়েত বা ওমানকে বলতে পারতো। ইরানের সঙ্গে তাদেরও ভালো সম্পর্ক আছে।’