English Version
আপডেট : ২ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:২৭

প্রতিদিন ঘি খাওয়া কি আদৌ উচিত?

অনলাইন ডেস্ক
প্রতিদিন ঘি খাওয়া কি আদৌ উচিত?

গরম গরম ভাতের শরীর থেকে তখনও ধিক ধিক করে ধোয়াটা বেরচ্ছে। আর ঠিক পাশেই পা ছড়িয়ে শুয়ে প্রমাণ সাইজের বেগুন ভাজাটা। আরে দাঁড়ান দাঁড়ান এখনই কী শুরু করবে, আম্মার হাতে তৈরি ঘি আগে পাতে পরুক, তবে না শুরু হবে ভুরিভোজ। গরমের ছুটিতে রোজ দুপুর বেলা এইভাবেই খাওয়াতেন আমার ঠাকুমা। অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। কলকাতা ছেড়েছে বেশ কিছু কাল হল। ঠাকুমাও আর বেঁচে নেই। তবু ছোট বেলার সেই স্মৃতিগুলো যেন আজও অমলিন। আম্মা নেই তো কী! স্বাভাবটা থেকে গেছে। আজও প্রতিদিন ঘি খাওয়ার অভ্যাসটা এখনও ছাড়তে পারেনি। রাতের বেলা গরম ভাতে ঘি মিশিয়ে খাওয়া চাইই-চাই। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা যে বলছেন প্রতিদিন ঘি খাওয়া একেবারেই ভাল নয়? তাহলে...

একথা ঠিক যে ২১ শতকের স্বাস্থ্য সচেতন বাঙালিরা অনেকেই ঘি খেতে পছন্দ করেন না। পাছে ওজন বেড়ে যায়! সেই ভয়ে তারা যেমন ভাতের পরিমাণে দাঁড়ি টেনেছেন, তেমনি রোজের ডায়েট থাকে বাদ পরেছে ঘিও। কিন্তু আজব ব্যাপার হল, চিকিৎসা বিজ্ঞান কিন্তু অন্য় কথা বলছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ঘি খাওয়ার সঙ্গে শরীর খারাপ হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং মস্তিষ্ক থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরে একাধিক অঙ্গের সচলতা বৃদ্ধিতে ঘি-এর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

নিশ্চয় বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা! তাহলে এক্ষুনি চোখ রাখুন বাকি প্রবন্ধে এবং জেনে নিন কেমনভাবে ঘি একাধিক শারীরিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে থাকে।

১. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়: খাবার হজম করতে সহায়ক নানাবিধ স্টমাক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়াতে ঘি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বল হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। এখানেই শেষ নয়, প্রখ্যাত সেলিব্রিটি নিউট্রিশনিস্ট রুজুতা দিওয়াকার তার লেখা একাধিক বইয়ে ঘির উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিযে বলেছেন, খিচুড়ি বা পুরান পলির মতো খাবার ঠিক মতো হজম করাতে এই সবের সঙ্গে ঘি খাওয়া মাস্ট! কারণ ঘি যে কোনও ধরনের রিচ কাবারকে সহজে হজম করিয়ে দিতে সক্ষম।

২. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে: নিয়মিত ঘি খেলে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে কোনও ধরনের সংক্রমণই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

৩. ব্রেন টনিক হিসেবে কাজ করে: নিউট্রিশনিস্টদের মতে নার্ভের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিকবাবে ব্রেন পাওয়ারের উন্নতিতে ঘি-এর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এত উপস্থিত ওমাগা- ৬ এবং ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীর এবং মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রাকাশিত বেশ কিছু গবেষমায় দেখা গেছে এই দুই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমারসের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে: ঘিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে উপস্থিত ফ্রি রেডিকালদের ক্ষতি করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। ফলে কোষের বিন্যাসে পরিবর্তন হয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে অনেকেই ঘি সহযোগে রান্না করে থাকেন। এই অভ্যাসও কিন্তু খারাপ নয়। কারণ ঘি-এর "স্মোকিং পয়েন্ট" খুব হাই। ফলে বেশি তাপমাত্রায় রান্না করলেও কোনও ক্ষতি হয় না।

৫.হার্টের খেয়াল রাখে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ঘিয়ে উপস্থিত একাধিক উপকারি ফ্য়াট শরীরে প্রবেশ করার পর খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনও ধরনের হার্টের রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

৬. ত্বকের সৈন্দর্য বৃদ্ধি করে: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে ঘি হল হল প্রকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, যা ত্বক এবং ঠোঁটের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন অল্প পরিমাণ ঘি-এর সঙ্গে যদি সামান্য় জল মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে ত্বকের বয়স চোখে পরার মতো কমে।

৭. ওজন কমাতে সাহায্য করে: একেবারেই ঠিক শুনেছেন! ঘি খেলে ওজন বাড়ে না, বরং কমে। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে ঘি-তে উপস্থিত এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বিদের ঝড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকবাবেই ওজন কমতে শুরু করে।

কতটা পরিমাণ ঘি খাওয়া স্বাস্থ্যকর: উপকারি খাবারও বেশি মাত্রায় খাওয়া উচিত নয়। কারণ এমনটা করলে শরীরের ভাল হওয়ার থেকে ক্ষতি হয় বেশি। যেমন, ঘি-এর কথাই ধরুন না। এই খাবারটি শরীরের এতটা উপকারে লাগে। কিন্তু কেউ যদি অনিয়ন্ত্রিত হারে ঘি খাওয়া শুরু করেন, তাহলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। তাহলে এখন প্রশ্ন হল, দিনে কত পরিমাণ ঘি খাওয়া চলতে পারে? চিকিৎসকদের মতে শরীরকে সুস্থ রাখতে দৈনিক ২ চামচের বেশি ঘি খাওয়া একেবারেই চলবে না।