English Version
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ০৬:৫০

ব্লু হোয়েলঃ তরুণ-তরুণীরা কেন আকৃষ্ট হয়?

অনলাইন ডেস্ক
ব্লু হোয়েলঃ তরুণ-তরুণীরা কেন আকৃষ্ট হয়?

ডাঃ তারেক আনোয়ার শিশির: বাংলাদেশে সম্প্রতি নতুন আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক মরণঘাতি গেমস ‘ব্লু হোয়েল’। সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়ার ভাইরাল হয়ে উঠেছে এ গেমটি নাম। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের এ খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে অভিভাবকদের মাঝে। বিষয়টিকে প্রযুক্তির চরম অভিশাপ বলে উল্লেখ করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।

ব্লু হোয়েল কী

ব্লু হোয়েল গেমটি প্রথম তৈরি হয়েছিল ২০১৩ সালে। “F57” নামের একটি রাশিয়ান হ্যাকার টিম (অনেক জায়গায় এরা “ডেথ গ্রুপ” নামেও পরিচিত) এই গেমটি তৈরি করে। গেমটির মাস্টার মাইন্ডে ছিল “ফিলিপ বুদেকিন” নামের একজন রাশিয়ান যুবক। সে রাশিয়ার একটি ভার্সিটিতে “সাইকোলজি” বিভাগে অধ্যায়নরত ছিল। ভার্সিটি থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর, সে এই গেমটি তৈরিতে মনোনিবেশ করে বলে জানা যায়।

ব্লু হোয়েলের সাইকোলজিকাল (মানসিক) প্রভাব

গ্রেফতারের পর ফিলিপ রাশিয়ার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনিকে জানায়, তরুন বয়সি ছেলেমেয়ে, সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা মানুষ এবং মানুষিক ভাবে বিকারগ্রস্থ রোগীদের (“biological waste”) টার্গেট করেই এই গেমটি সে তৈরি করেছে।

সে আরও বলে যে, যারা এই সমাজের হতাশাগ্রস্থ মানুষ এবং যারা মানুষিক ভাবে বিকারগ্রস্থ তারা এই সমাজের বোঝা, সমাজে তাদের কোন প্রয়োজন নেই, মৃত্যুই তাদের কাম্য (‘’cleaning society’’) তাই এই গেমটির মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে মানুষিক চাপ প্রোয়োগ করে, তাদেরকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়।

আর টিনএজরা এমনিতেই চ্যালেঞ্জ প্রিয় হয়ে থাকে এবং তাদের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই তাদেরকে গেমটি খেলতে বাধ্য করা হয়। এটা এতটাই আকর্ষণীয় যে, এক স্টেপের পর আরেক স্টেপে যেতে ছেলেমেয়েরা অস্থির হয়ে পড়ে। একটা পর্যায়ে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তখনই আস্তে আস্তে তাদের আত্মহননের পথে নিয়ে যায়।

এই গেমের ৫০ টি ধাপে প্রথমে নিজের শরীরের ক্ষতি করতে বলা হয়, তারপর ড্রাগস নিতে বলা হয় এবং সর্বশেষে আত্নহত্যা করার নির্দেশ থাকে।

এই গেমের কিছু ‘ট্রিক’ হলঃ (ক) আরও হতাশ করে দেয়া, (খ) নিজেকে অপদার্থ বা অকেজ ভাবতে বাধ্য করা, (গ) নিজের শরীরের ক্ষতি করা (self injury), (ঘ) ড্রাগস নিতে বাধ্য করা, (ঙ) যথেষ্ট ঘুমনো ব্যাহত করা, (চ) মানসিক চাপ প্রদান।

এসকল বিষয়গুলো গেমারের মানসিক প্রতিরোধ ভেঙ্গে ফেলে এবং এভাবেই গেমটি (বা গেমটির অ্যাডমিন) গেমারকে আত্নহত্যা করতে বাধ্য করে।

তরুণ-তরুণীরা কেন আকৃষ্ট হয়?

ব্লু হোয়েলে সাধারণত অবসাদগ্রস্ত তরুণ-তরুণীরা আসক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে গভীর রাতে বা একাকী দীর্ঘ সময় যারা ইন্টারনেটে সামাজিকমাধ্যম জগতে বিচরণ করে তারা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

এছাড়া তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার যে আগ্রহ সেটাকে কাজে লাগিয়ে ফাঁদে ফেলে এর কিউরেটররা।

অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে সাহসের প্রমাণ দিতে বলা হয়। এজন্য তাদের ছোট ছোট কিছু সাহসী কাজ দিয়ে এগিয়ে নেয়া হয়। একবার এতে জড়িয়ে পড়লে আর সহসা বের হওয়ার সুযোগ থাকে না।

সহজ ও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সাহস আছে কি না- এমন কথায় সাহস দেখাতে গিয়ে দিনকে দিন যুবক-যুবতীরা আকৃষ্ট হচ্ছে এই গেমে। তবে একবার এ খেলায় ঢুকে পড়লে তা থেকে বের হয়ে আসা প্রায় অসম্ভব।

বাঁচার উপায়

গেমটি ব্যান করা এর থেকে মুক্তির উপায় নয়, প্রয়োজন গভীর সাইকোলজিকাল বিষয় গুলো চিহ্নিত করা। এই গেমে আসক্ত বা আগ্রহী মানুষকে নিচের পয়েন্টগুলো বোঝান।

প্রথমেই চিন্তা করুন, আপনি কেন গেমের নির্দেশে নিজের ক্ষতি করবেন? নিজের ক্ষতি করার মধ্যে কোন গর্ব নেই। এতে আপনি মানুষের সম্মান হারাবেন। সবাই আপনার দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাবে। আপনি কি এইটা চান? আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতি করা অনেক বড় পাপ। আত্মহত্যা করলে আপনি অনন্তকাল দোজখের আগুনে জ্বলবেন। আপনি বিষণ্ণতায় ভুগলে একাকি থাকা পরিহার করুন। বন্ধুবান্ধবের সাথে থাকুন অথবা প্রতিদিন নিয়মিত বাইরে ঘুরাঘুরি করুন। জীবন অনেক সুন্দর ও আনন্দময়। একটু চোখ খুলে দেখার চেষ্টা করুন। তাহলেই জীবনকে উপভোগ করতে পারবেন