English Version
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১৯:৩৭

‘পাথর’ হয়ে যাচ্ছে নওগাঁর মেহেদী!

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘পাথর’ হয়ে যাচ্ছে নওগাঁর মেহেদী!
নওগাঁর মেহেদী

আট বছরের ছেলেটি ঘরের বাইরে বের হয় না। কারণ তাকে দেখলে ভয় পায় অন্য ছেলে-মেয়েরা। কোনো কিছু ধরতে গেলে প্রচণ্ড ব্যথা পান ছেলেটি। মেহেদী হাসান নামে এ ছেলেটিকে সমাজ থেকে দূরে রাখা হচ্ছে তার এক বিরল চামড়ার রোগের কারণে। এই বিরল চামড়ার রোগের কারণে মেহেদীর শরীরের বিভিন্ন অংশ পাথরের মতো হয়ে যাচ্ছে।

তার মুখ দেখতে স্বাভাবিক হলেও শরীরের বিভিন্ন অংশে সে সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে তার হাঁটতে বা কোনো কিছু স্পর্শ করতে সমস্যা হচ্ছে।

তার আশেপাশের মানুষ এমনকি তার দাদিও তাকে ঘৃণা করে বলে জানিয়েছে মেহেদীর মা। মেহেদীর অসহায় মা সরকারের কাছে আবেদন করেছেন যেন তার সন্তানের এই বিরল রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। এই রোগটি কেড়ে নিয়েছে মেহেদীর সুন্দর শৈশব। 

মেহেদীর মা জাহানারা বেগম খুব কষ্ট নিয়ে বলেন, ‘অন্য বাচ্চারা তাকে ঘৃণা করে। তার এই অসুস্থতার কারণে তাকে নোংরা মনে করে। গত আট বছর ধরে তাকে ঘরেই রাখা হয়েছে। ঘর থেকে বের হলে মানুষ ভয় পায়। কেউই তাকে দেখতে বা তার সামনে খেতে পছন্দ করে না। তাকে দেখলে মানুষ গালি দেয়।’

মেহেদীর কষ্ট নিয়ে তার মা আক্ষেপ করে বলেন, ‘সে সবসময় ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে। তার কষ্ট দেখলে আমার মন ভেঙে যায়।’

মেহেদী হচ্ছেন জাহানারার তৃতীয় সন্তান। সাত পাউন্ড ওজন নিয়ে স্বাভাবিক জন্ম হয়েছিল তার। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা নওগাঁর দোনা রাণিনগর গ্রামে বসবাস করে মেহেদীদের পরিবার। জন্মের বারদিনের মাথায় মেহেদীর ইটকল শ্রমিক বাবা দেখতে পান তার ছেলের ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিচ্ছে। 

প্রথমদিকে তারা মনে করেছিল এটা হয়তো মশার কামড়ের কারণে হয়েছে কিন্তু এটা ধীরে ধীরে পায়ের গোড়ালি থেকে তলপেট পর্যন্ত চলে আসে। আতঙ্কিত বাবা মা স্থানীয় ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওষুধ-পথ্য নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু সমস্যাটা ঠেকানো সম্ভব হয়নি। হতাশায় ভেঙে পড়ে তারা চিকিৎসা নেওয়া বন্ধ করে দেন। মেহেদীর বাবা আবুল কালাম আজাদ কষ্ট নিয়ে বলেন: ‘কোনো ডাক্তারই তার রোগ ধরতে পারছিল না।’

ছেলের চিকিৎসার খরচ নির্বাহ করতে অল্প আয়ের সব চলে যায় দরিদ্র বাবা-মায়ের। নিজেদের সব জমানো টাকা চলে গেছে ছেলের চিকিৎসায়।  হতাশায় ভেঙে পড়ে গত একবছর মেহেদীকে ডাক্তারের কাছে নিচ্ছেন না মেহেদীর বাবা-মা। সূত্র : ডেইলি মেইল।