‘বৃক্ষমানবী’ সাহানার সফল অস্ত্রোপচার
নেত্রকোণার সাহানা খাতুনের মুখে, কানে, নাকে শেকড়ের মতো কিছু উপসর্গ ছিল। বাংলাদেশে বিরল 'বৃক্ষমানব' রোগে আক্রান্ত ১০ বছরের কন্যাশিশু সাহানা খাতুনের অস্ত্রোপচার হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে।
সাহানাই বাংলাদেশের প্রথম নারী যে বিরল এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন 'অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। সাহানা ভালো আছে। তার আর কোনো অস্ত্রোপচার লাগবে না।’
গত মাসের শেষে দিকে শরীরে গাছের মত উপসর্গ নিয়ে সাহানা খাতুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সাহানা খাতুনের থুতনি, নাক,দুই কানের লতিতে শিকড় ছিল।
অস্ত্রোপচারের আগেই ডাক্তার সামন্ত লাল সেন বলেছিলেন বাজানদারের তুলনায় অনেকাংশে কম আকারে ছিল সাহানার মুখে গজানো শিকড়গুলো। মাত্র দশ বছর বয়সে এই রোগে আক্রান্ত শিশু সাহানা যখন হাসপাতালে ভর্তি হয় তখন তার চোখেমুখে একধরনের ভীতি ছিল। চিকিৎসকরা আশা করছেন, অস্ত্রোপচারের পর সাহানার মধ্যে শিশুসুলভ চঞ্চলতা ফিরে আসবে।
এর আগে এ ধরণের রোগে কোন মেয়ে বা নারীর আক্রান্ত হওয়ার খবর শোনা যায়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা ডা: সেন বলেছেন "বাজানদার যখন আমাদের কাছে আসে এটা তখন নতুন ধরনের রোগ ছিল চিকিৎসকদের কাছে। এর আগে কখনও এমন দেখিনি আমরা। তাছাড়া এই রোগের কারণগুলো এখনও জানতে পারেনি চিকিৎসকেরা। এটা কি জেনেটিক কারণে হচ্ছে না অন্য কিছু"।
কন্যাশিশু সাহানা খাতুনসহ বাংলাদেশে এ নিয়ে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন। আর যেহেতু এ ধরনের রোগী পাওয়া যাচ্ছে ফলে এই রোগটির প্রকোপ এবং প্রবণতার বিষয়ে বাংলাদেশে চিকিৎসকেরা এখন একটি গবেষণার কথা ভাবছেন।
"বাজানদারের রক্তের নমুনা যেমন বাইরে পাঠানো হয়েছে, এই মেয়ের রক্ত ও টিস্যু ডাব্লিউএইচওর মাধ্যমে আমেরিকাতে পাঠানো হবে। আগের বৃক্ষমানবদের রক্ত বা টিস্যুর নমুনা নিয়ে যিনি গবেষণা করছেন তিনি সবকিছু মিলিয়ে দেখবেন"- বলছিলেন ডা: সামন্ত লাল সেন।
এই রোগ কিভাবে নিরাময় করা সে বিষয়েও এখন জরুরিভিত্তিতে ভাবা দরকার বলে উল্লেখ করেন ডা: সেন। সাহানা খাতুন অস্ত্রোপচার শেষে চিকিৎসকরা আশা করছেন সুস্থ হয়ে আগামী দু'সপ্তাহ পরে সে বাড়ি ফিরে যেতে পারবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসা হয়েছিল বৃক্ষমানব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আবুল বাজানদারের। তার হাতে ও পায়ে গাছের শিকড়ের মতো যা গজেছিল, পরে তা কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেয়া হয়।