English Version
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৮:৩৬

তালাক নোটিশে যে স্বাক্ষর রয়েছে সেটি শাকিবের নয়: অপু বিশ্বাস

অনলাইন ডেস্ক
তালাক নোটিশে যে স্বাক্ষর রয়েছে সেটি শাকিবের নয়: অপু বিশ্বাস

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিনএসিসি) পারিবারিক আদালত বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান ও নায়িকা অপু বিশ্বাসকে শাকিব খানের পাঠানো তালাক নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে আজ (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ মহাখালী কার্যালয়ে তাদের দুজনকেই থাকতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ডিএনসিসি’র সালিশ পরিষদে একাই এসে হাজির হন অপু বিশ্বাস। তখন অপুর মামা স্বপন বিশ্বাস তার সঙ্গে ছিলেন। তবে এ সালিশে শাকিব খান উপস্থিত হননি।

এরপর প্রায় ৩০ মিনিট তাদের (শাকিব খান-অপু বিশ্বাস) বিচ্ছেদের শুনানি হয়। আর শাকিব খান না থাকায় সালিশের নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে ১২ ফেব্রুয়ারি। এদিকে সালিশ পরিষদে শুনানি শেষে প্রিয়.কমের সঙ্গে আলাপকালে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস বলেন, ‘শাকিব খান যে তালাক নোটিশ পাঠিয়েছেন সেখানে শাকিব যে স্বাক্ষর করেছেন সেটি শাকিব খানের নয়।’ সে সময় অপু তার পারিবারিক কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে তার যে স্বাক্ষর দেখেছি সেটির সঙ্গে তালাক নোটিশের যে স্বাক্ষর রয়েছে তার কোনো মিল নেই।’ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এর 

সেসময় অপু বিশ্বাস আরও বলেন, ‘আমি এখানে এসে শাকিব খানের পক্ষের কাউকে দেখলাম না। আমি ভেবেছিলাম তার পক্ষ থেকে কেউ না কেউ আসবে। আমি খুবই অবাক! ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সম্পর্কে শাকিবের যে ধারণা রয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ ভুল বলে আমার মনে হয়। আর একটি বিষয়, ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য শাকিব খান যে সমস্ত তথ্য কিংবা প্রমাণ দিয়েছেন সেখানেও তথ্য-প্রমাণের অনেক ঘাটতি রয়েছে। আর আমার তো একটি বাচ্চা রয়েছে এবং ধর্মান্তরিত হয়েছি। যার কারণে আমি শাকিবের সংসার করতে চাই।

অপ ‍বিশ্বাস বলেন, আমি আরেকটি বিষয় বলতে চাই, শাকিব যদি রাগের মাথায় এই সিদ্বান্তটি নিয়ে থাকে, তার বাচ্চার কথা চিন্তা করে হলেও এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হওয়া উচিত। এখন যা ঘটছে এতে আমার সম্মানহানি হচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আমি বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে দেখব না।’

এরপরই মহাখালির ডিএনসিসি অঞ্চল-৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেনের অফিস কার্যালয় ত্যাগ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের এ সময়ের আলোচিত এ নায়িকা। ডিএনসিসি কর্মকর্তা হেমায়েত প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমরা প্রথম নোটিশ দিয়েছিলাম, এরপর বিবাদী পক্ষের অপু বিশ্বাস আজ ১২টার দিকে হাজির হয়েছেন। এবং তার বক্তব্য প্রদান করেছেন। তিনি মিমাংসা চান। তবে বাদি শাকিব খান হাজির হননি। আমরা দ্বিতীয় শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছি ১২ ফেব্রুয়ারি। আজ আমরা নতুন করে আরেকটি নোটিশ জারি করব। এরপর যদি না আসেন আমরা তৃতীয় নোটিশ দিব। এরপরও যদি না আসেন, তারপর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। মানে আইন অনুযায়ী ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যাবে। এরপর তাদের কেউ পারিবারিক আদালতে যাবেন কি না, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। আবার চাইলে তাদের যে কেউ মামলাও করতে পারবেন। একটি ডিভোর্স কার্যকর করার জন্য যে তথ্য ও প্রমাণ দরকার তার অনেক কিছুই শাকিব খান প্রদান করেননি।’  

জানা গেছে, শাকিব খান বর্তমানে ব্যাংককে রয়েছেন। সেখানে ‘আমি নেতা হব’ ছবির গানের শুটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে হোয়াটসঅ্যাপে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর এ বিষয়ে শাকিবের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রযোজক ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন এ প্রতিবেদক। তিনিও সাড়া দেননি। তারপর শাকিব খানের চাচাতো ভাই মনিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

তবে শাকিব খানের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম দুপুর একটার দিকে প্রিয়.কমকে বলেন, ‘শাকিব খান আমাকে জানিয়েছেন, তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটিই চূড়ান্ত। এরপর আমি কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন, যেহেতু শাকিব খান তার সিদ্বান্তে অটল রয়েছেন, তাই সেখানে শাকিব খান কিংবা তার কোনো আইনজীবীর অ্যাটেন্ড করার প্রয়োজন নেই।’

বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান ও নায়িকা অপু বিশ্বাসের ব্যক্তি জীবনে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা টানাপোড়েন একটা সময় গিয়ে তালাক নোটিশে রূপ নেয়। গত বছরের ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাকিব খান তার আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলামের কার্যালয়ে যান। তিনি অপুকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে এই আইনজীবীর কাছে আইনগত সহায়তা চান। এরপর শাকিব খানের পক্ষে আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলামের অফিস থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র কার্যালয়, অপু বিশ্বাসের ঢাকার নিকেতনের বাসা এবং বগুড়ার ঠিকানায় তালাক নোটিশ পাঠানো হয়।

সিটি করপোরেশনের পারিবারিক আদালত সূত্রে জানা গেছে, কোনো পক্ষ তালাকের আবেদন করলে আদালতের কাজ হচ্ছে ৯০ দিনের মধ্যে উভয়কে তিনবার ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করা। সমঝোতা না হলে স্বাভাবিকভাবেই তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। এখানে সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।পারিবারিক একটি ছবিতে শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও আব্রাম। ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশি সিনেমার এ সময়ের আলোচিত নায়িকা শবনম বুবলির সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে একটি স্থির চিত্রে শাকিব খানকে দেখা যায়। ছবিতে ‘ফ্যামিলি টাইম’ ক্যাপশন লিখে নিজের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ করেন বুবলি। এরপরই অপু বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে শাকিব খানের। এরপর ছবিটি প্রকাশের গত বছরের ১০ এপ্রিল (সোমবার) বিকেল চারটায় দীর্ঘদিন গোপনে থাকা বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন অপু। দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সব গোপন কথা ফাঁস করে দেন। এরপর থেকেই তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন দিনকে দিন বাড়তে থাকে।

ভারতের কলকাতার একটি ক্লিনিকে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় শাকিব-অপুর ছেলে আব্রাহাম খান জয়ের। সে সময় অপু বিশ্বাসের সিজারও করা হয়। অপু বিশ্বাস ২০০৪ সালে আমজাদ হোসেনের ‘কাল সকালে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। ২০০৬ সালে পরিচালক এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। ২০০৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা এই জুটি একাধারে ৭০টির মতো ছবিতে জুটি বাঁধেন। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একসময় পরস্পর প্রেমের বাঁধনে জড়িয়ে যান। এরপর ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল গোপনে বিয়ের বন্ধনে জড়ান শাকিব-অপু।