English Version
আপডেট : ২২ নভেম্বর, ২০১৭ ১০:১৪

চাচির সাথে বাবার পরকীয়া দেখে ফেলাই কাল হলো ফরিদার!

অনলাইন ডেস্ক
চাচির সাথে বাবার পরকীয়া দেখে ফেলাই কাল হলো ফরিদার!

সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের দ্বিরালী গ্রামে সবুজ মিয়া তার ১৬ বছরের মেয়ে ফরিদাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে গুছালী ঘরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে।

পরবর্তীতে নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা করে। ঘটনাটি ঘটে গত ১৬/১০/২০১৬ইং তারিখে।

মামলা টি সম্পুর্ণ ক্লু লেস অবস্থায় ছিল। থানা পুলিশের তদন্তের পর জটিল এই মামলাটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারস এর মাধ্যমে নেত্রকোনা সিআইডিতে আসে। সকলের ধারণা ছিল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে এবং থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ডাক্তার এর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট।   ঘটনার পাঁচ মাস পর ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে বাদী কর্তৃক হত্যা মামলা দায়ের হয়। কেউ কেউ তো বলেই দিল ডাক্তার ভূল রিপোর্ট দিছে। ফাঁকা বাড়িতে গভীর রাতে গোচালা ঘরে ফাঁসিতে ঝুলানো লাশ। থানা পুলিশ মোবাইল কল লিস্ট ও মেয়েটির প্রেমিক, এলাকার বখাটে গ্রেফতার/ রিমান্ড ইত্যাদি অন্যান্য তথ্য নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।

মামলাটি সিআইডি তে আসার পর এস আই প্রীতেশ তালুকদারের নামে হাওলা হলে। ময়মনসিংহের বিশেষ পুলিশ সুপার (অপঃ) মতিউর রহমানের আদেশে মামলাটির তদন্তের জন্য সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা আদা জল খেয়ে মাঠে নামেন।

এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সিআইডি শংকর কুমার দাসের দিক নির্দেশনায়, পরিশেষে রহস্য উদঘাটন করতে সফল হন। বাদী সবুজ মিয়া, পিতা মৃত আনফর, সাং বিরিয়ালী থানা নেত্রকোনা সদর। সবুজ স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করত। দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ফরিদা বেগম (১৬)।

বাকী সন্তান গুলো ছোট এবং স্ত্রী বেদানা বেগমসহ একই বাসায় বসবাস করা-কালীন সময়ে সোহেল নামের সবুজ মিয়ার ভাগ্নের সাথে ফরিদার প্রেম হয়। এবং পারিবারিক ভাবেই সোহেলের সাথে ফরিদার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একসময় ফরিদাকে বিবাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু সোহেলের মায়ের পাত্রী পছন্দ হয়নি বলে বিয়ে ভেঙে যায়।

এই নিয়ে ফরিদার মন খারাপ থাকে। কিন্তু ঘটনার দিন (২৪ অক্টোবর) সবুজ মিয়ার বাড়ির পাশে জনতা বাজারে যাত্রা গানের রিহার্সাল চলছিল। সবুজ মিয়ার বাড়িতে সবুজ মিয়া/ খোকন/ বকুল/ চান মিয়ার বসত ঘর পাশাপাশি। রাত অনুমান দশটার দিকে বাড়ির নারী-পুরুষ সবাই যাত্রা দেখতে জনতা বাজারে চলে যায়। বাড়িতে থাকে সবুজ মিয়ার মেয়ে ফরিদা (১৫) ও তার ছোট দুইটি ভাই বোন।

চান মিয়া হচ্ছে সবুজ মিয়ার আপন ছোট ভাই। তাদের পাশের ঘরেই থাকতেন চান মিয়ার স্ত্রী। ঐদিন চান মিয়া কুমিল্লা ছিল। রাত অনুমান এগারোটার দিকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সবুজ মিয়া যাত্রা নাটক হতে চুপিসারে বাড়িতে চলে আসে। আপন ছোট ভাইয়ের বউ মিনা বেগমকে কোলে করে গোচালা ঘরে নিয়ে যায় এবং দুইজনে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।

শব্দ পেয়ে সবুজের মেয়ে গোচালা ঘরে ঢুকে তাহার পিতা সবুজ মিয়া ও চাচি মিনা বেগমকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে এবং সে বলে আমি আম্মুর কাছে সব বলে দিব। সাথে সাথে সবুজ মিয়া তার মেয়েকে ধরে ফেলে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।

মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ফরিদার লাশ রশি দিয়ে গোচালার মারইলের সাথে ঝুলিয়ে পাশে একটা কাঠের চেয়ার রেখে বাড়ি থেকে আবার যাত্রা গানে চলে যায়।

রাত অনুমান দুইটার দিকে অন্যান্য লোকজনসহ ফরিদার মা বাড়িতে ফিরে ফরিদাকে না পায়ে খোঁজাখুঁজি করে গোচালা ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পায়। এদিকে খুনি সবুজ মিয়া খবর পাওয়া মাত্র জ্ঞান হারানোর নিখুঁত অভিনয় করে।

পরের দিন থানা পুলিশ এসে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে। এই কথা গুলো খুনি সবুজ মিয়ার আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মিনা বেগম ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পাঁচ মাস পরে ২২ মার্চ খুনি সবুজ মিয়া নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামি করে নেত্রকোনা মডেল থানা মামলা নং ২৫ তারিখ ২২/০৩/২০১৭ ধারা ৩০২/৩৪ দায়ের করে।

এই ক্লু বের করতে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে প্রীতেশ তালুকদারকে চার রাত সবুজ মিয়ার বাড়ির পিছনে অবস্থান করতে হয়ে তার পরকীয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হতে। তার পর মিনা বেগমকে গ্রেফতার করে মূল রহস্য উদঘাটন করেন সিআইডির এসআই প্রিতেশ তালুকার।