English Version
আপডেট : ১৪ আগস্ট, ২০১৭ ১১:০৪

ইয়াবায় বুঁদ ছাত্রলীগের দুই নেতা

অনলাইন ডেস্ক
ইয়াবায় বুঁদ ছাত্রলীগের দুই নেতা

নানা অপরাধে সম্প্রতি সমালোচিত রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম হূদয় ও কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পারভেজ হোসেন বিপ্লব। এবার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেল, দলবল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বসেই নিয়মিত ইয়াবা সেবন করেন হূদয়। আর বিপ্লবের ইয়াবা সেবনের প্রমাণ পাওয়া গেছে একটি স্থিরচিত্রে। কালের কণ্ঠ অফিসে আসা অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে ওই ভিডিও ও স্থিরচিত্র পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেরেবাংলানগর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হূদয়ের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বছর ধরেই ইয়াবা সেবন এবং ডিলারের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ইয়াবায় আসক্ত ও বিবাহিত ব্যক্তিকে থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক করায় সংগঠনের ত্যাগী অনেক সাবেক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইয়াবা সেবন ও বিক্রির অভিযোগে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে ডেকে নিয়ে তাঁকে সতর্ক করেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্ধ হয়নি হূদয়ের মাদক সেবন ও বিক্রির কর্মযজ্ঞ।

কালের কণ্ঠ’র কাছে আসা একটি ভিডিও চিত্রেও ছাত্রলীগ নেতা হূদয়কে দল বেঁধে ইয়াবা সেবন করতে দেখা গেছে। হূদয়ের সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবুল বাশার খান, বিপ্লব হোসেন ও মো. সোহাগ ওরফে সুন্দীর সোহাগসহ আট থেকে  দশজন। তারা আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের কোনো এক দলীয় কার্যালয়ে বসেই ইয়াবা সেবন করছিল।

থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ওই ইয়াবা সেবনের ঘটনায় সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

এ প্রসঙ্গে শেরেবাংলানগর থানা ও ওয়ার্ড কমিটির কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিলারদের মাধ্যমে এলাকার অলিগলিতে ইয়াবা বিক্রি করান হূদয়। বন্ধুদের নিয়ে তিনি নিজেও ইয়াবার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হূদয়ের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরেই ইয়াবা সেবন ও ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ওর কারণে স্থানীয় অনেক ভালো ভালো ছেলেও ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে। বিষয়টি আমরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়েছি। এ ধরনের নেতার কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ’

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন বলেন, ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকায় হূদয়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মহানগর উত্তরের সহসভাপতি কাওসার আহাম্মেদ বিজয়।

এদিকে একটি স্থিরচিত্রে ইয়াবা সেবন করতে দেখা গেছে কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক বিপ্লবকে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড়গ্রামের মো. মোখলেছুর রহমানের ছেলে মো. নাঈমের ঘরে ইয়াবা সেবন করছিলেন তিনি। বিপ্লবেরই বন্ধু মো. ইয়াসিন তাঁকে সহযোগিতা করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লবের সঙ্গে থেকে ইয়াবার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে পূর্ব রসুলপুরের শাকিল ও রানা। মধ্য রসুলপুরের বাবা মাসুমের ছোট ভাই রুবেল মিয়া ও তার স্ত্রীর বড় ভাই জয়নাল মিয়া ইয়বা আসক্ত। তারা ইয়াবা কারবারেও জড়িত। আগামী দিনে ছাত্রলীগে পদপদবি পাওয়ার জন্য বড়গ্রামের আরিফ আলী ও আলীনগরের মিলন মিয়া ওরফে গ্যাজে মিলনসহ অনেকেই বিপ্লবের সঙ্গে ইয়াবা সেবন করছে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা বলেন, ইয়াবা না খেলে ছাত্রলীগ নেতার এক দিনও চলে না। তাঁর বিরুদ্ধে কেন ছাত্রলীগের মহানগর নেতারা চুপচাপ বোঝা যাচ্ছে না।

ইয়বা সেবন প্রসঙ্গে কামরাঙ্গীরচর থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পারভেজ হোসেন বিপ্লব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ করে আমার সুনাম নষ্ট করতে চাচ্ছে প্রতিপক্ষ। ’ ইয়াবা সেবনের ছবির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ‘ওই ছবি বানানো। ’

ইয়াবা সেবনের ব্যাপারে জানতে চাইলে শেরেবাংলানগর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম হূদয় স্বীকার করেন, ভিডিওটি তাঁরই। তবে এটি পাঁচ বছর আগের দাবি করে তিনি বলেন, ওই সময় তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। হজ করে আসার পর আর মাদক সেবন করেন না। মাদকের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতাও নেই। প্রতিপক্ষ তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এখন এই ভিডিও ছড়াচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।