English Version
আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১৮:২০

আদনান হত্যা: ডিস্কো গ্রুপের জুইস ‘সরাসরি আক্রমণ করে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
আদনান হত্যা: ডিস্কো গ্রুপের জুইস ‘সরাসরি আক্রমণ করে’

রাজধানীর উত্তরায় চাঞ্চল্যকর কিশোর আদনান কবীর (১৩) হত্যাকাণ্ডে সরাসরি আক্রমণ করে ডিস্কো গ্রুপের সদস্য জাহিদুল ইসলাম জুইস (২১)। 

মঙ্গলবার রাতের অভিযানে আদনান হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে এই জুইসও রয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেসহ অন্যান্যরা হত্যার পরিকল্পনাসহ বিভিন্নভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।

মুফতি মাহমুদ আরো জানান, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কথিত ডিস্কো বয়েজ এবং বিগবস গ্রুপের দলনেতাসহ মোট ৮ সদস্যকে গত রাতের বিভিন্ন সময় উত্তরা থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১ এর অভিযান দল। মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

আটকেরা হলো, আদনান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি ও কথিত ডিস্কো বয়েজ গ্যাং গ্রুপের দলনেতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু ওরফে রায়হান আহম্মেদ সেতু ওরফে ডিস্কো সেতু (২২)। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এজাহারভুক্ত অপর আসামি ও কথিত বিগবস গ্যাং গ্রুপের দলনেতা মো. আক্তারুজ্জামান ছোটন (১৯), মো. শাহীনুর রহমান (১৭), মো. রমজান মোবারক (১৭), মো. সেলিম খান (২৩), মো. ইব্রাহীম হোসেন ওরফে সানি (২৮), মিজানুর রহমান সুমন (২২) ও জাহিদুল ইসলাম জুইসকে (২১) আটক করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৩টি চাকু, ২টি চাপাটি, ২টি রড, ৩টি চেইন, ৩টি স্প্রে কালার বোতল, ২টি স্কুল ব্যাগ ও ৪ পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি জানান, এ ৮ জনের মধ্যে শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতুসহ দুইজন ডিস্কো বয়েজ গ্যাং গ্রুপের সদস্য। আর আক্তারুজ্জামান ছোটনসহ বাকি ৬ জন বিগবস গ্যাং গ্রুপের সদস্য। এদের মধ্যে ছোটনের নামে আগেই মামলা ছিল। ডিস্কো বয়েজ গ্যাং গ্রুপের দলনেতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তার বাবা এয়ারপোর্টের একজন সিএন্ডএফ এজেন্ট। সে বর্তমানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির বিবিএ'র ছাত্র। আর ডিস্কো গ্রুপের অপর সদস্য জাহিদুল ইসলাম জুইস বর্তমানে উত্তরা স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র। তার বাবা একজন মুদি দোকানের ব্যবসায়ী।

অন্যদিকে বিগবস গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য বলে জানান মুফতি মাহমুদ। এদের গ্যাং গ্রুপ লিডার আক্তারুজ্জামান ছোটন ইউনিক এডুকেয়ারের দশম শ্রেণির ছাত্র এবং তার ভাই মিজানুর রহমান সুমন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। অন্যান্যরা স্কুলে থেকে বিভিন্ন সময় ছিটকে পড়া। এরমধ্যে মো. ইব্রাহীম হোসেন ওরফে সানি ভাড়ায় চালিত ইজিবাইক চালক, মো. সেলিম খান পোশাক কারখানার শ্রমিক, মো. শাহীনুর রহমান পরিবহন শ্রমিক এবং মো. রমজান মোবারক সাউন্ড সিস্টেম ভাড়ার দোকানের কর্মচারী।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, উত্তরায় ২০০৯ সালে সেতুর নেতৃত্বে ডিস্কো বয়েস গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করে। এরা মূলত উত্তরা কেন্দ্রিক। অন্যদিকে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ছোটনের নেতৃত্বে ডিস্কো বয়েস গ্রুপের সহযোগী গ্রুপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিগবস গ্রুপ। আর এদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাং গ্রুপ হলো নাইন স্টার গ্রুপ। এটা তালাচাবি রাজুর নেতৃত্বে ২০১৩ সালে আত্মপ্রকাশ করে। তদন্তে উঠে আসে এই একেকটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জন।

গ্রুপগুলো উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক এবং চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে নিজেদের মধ্যে বিরোধে লিপ্ত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জানুয়ারি ডিস্কো বয়েস গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা মিলে নাইন স্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার তালাচাবি রাজুকে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করে। এর পালটা প্রতিশোধ হিসেবে ৫ জানুয়ারি নাইন স্টার গ্রুপের সদস্যরা বিগবস গ্যাং গ্রুপের লিডার আক্তারুজ্জামান ছোটনকে আক্রমণ করে।

আবারো প্রতিশোধ নিতে তৃতীয় দফায় ৬ জানুয়ারি ডিস্কো বয়েস গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা মিলে নাইন স্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার তালাচাবি রাজুকে আক্রমণ করে। এসময় রাজুর সাথে ছিলো আদনান কবীর। তার সাথে তালাচাবি রাজুর সখ্যতা ছিলো। আক্রমণের পর রাজু পালাতে পারলেও আদনান তাদের হাতে ধরা পরে। তখন ডিস্কো বয়েস গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা মিলে আদনানকে নির্দয় ভাবে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে আঘাত করে। এতে আদনান মারা যায়। তবে তারা স্বীকার করেছে তাদের টার্গেট ছিলো রাজুকে মারা। আদনান তার সহযোগী হিসেবে এর শিকার হয়েছে।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন র‍্যাব-১ এর নব নিযুক্ত অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম, র‍্যাব সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখার উপ-পরিচালক মেজর রইসুল ইসলাম, গণমাধ্যম কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, র‍্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক মো. মাইন উদ্দিন প্রমুখ।

উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদনান ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় খুন হয়। এ ঘটনায় আদনানের বাবা কবীর হোসেন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এরআগেও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন আদালতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। 

উত্তরায় গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে আদনান খুন হয় বলে ধারণা পুলিশের।