English Version
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ১৫:৪৬

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে

রেলপথে পরিবহন ব্যয় কম এবং সহজ যোগাযোগমাধ্যম হওয়ায় ট্রেনেই সবচেয়ে বেশি মানুষ চলাচল করে এবং নিরাপদও মনে করে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এই রেলসেবার মান নিয়ে বরাবরই যাত্রী সাধারণ থেকে শুরু করে সবাই অসন্তুষ্ট। দেশের যেকোনো জেলার চেয়ে সবচেয়ে বেশি ট্রেন চলাচল করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলরুটে। এই রুটে চলাচলরত ডেমো ছাড়া বাকি সবগুলো ট্রেন বেসরকারি তত্ত্বাবধানে চলাচল করে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত এই রুটে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ১৬ জোড়া (সরকারি তিন জোড়া ডেমুসহ) ট্রেন চলাচল করে। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ঝুঁকিপুর্ণ ও অরক্ষিত অবস্থায় চলছে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা ট্রেন সার্ভিস। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল লাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কাচাঁবাজার, ফলের দোকান, মার্কেটসহ অসংখ্য বস্তিঘর।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে প্রতিটি ট্রেন চাষাঢ়া, ফতুল্লা, পাগলা, শ্যামপুর, গেন্ডারিয়া হয়ে কমলাপুর যায়। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ১৮ কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে কমপক্ষে ৪৫টি অবৈধ রেলক্রসিং আছে, যেখানে কোনো ব্যারিকেড ব্যবস্থা নেই। আর ১৩টি রয়েছে বৈধ রেলগেট। প্রথম স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেন স্টেশনে এসে থামলে যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে ওঠে। প্রতিটি ট্রেনে যে পরিমাণ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী চলাচল করে। তাছাড়া টিকিট চেকও ঠিকমত হয় না। অনেকেই টিকিট ছাড়াই চলাচল করে। ফলে যাত্রী বহনের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করে দেখা গেছে, সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রেলের ভাড়ার তুলনায় সেবার মান নিয়ে। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের ট্রেনে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন চলাচলকারী বাবুল হোসেন জানান, এই রুটে দাঁড়িয়ে দ্বিগুণ যাত্রী চলাচল করতে পারে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে ৩৫ মিনিটের রাস্তায় মোট সাতটি স্টেশন। এই স্টেশনগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে যাত্রী ওঠে।

তবে নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর স্টেশনে ৩৫ মিনিটে পৌঁছানোর কথা থাকলেও ৪০ মিনিট কখনো ৪৫ মিনিট লেগে যায়। সময়মতো কখনো ট্রেন পৌঁছাতে পারে না। এবং নারায়ণগঞ্জেও আসতে পারে না।সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনে পাগলা থেকে ওঠা নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি প্রথমবর্ষের ছাত্রী আশা মনি জানান, প্রতিদিনই এই রুটে চলাচল করি। বেশির ভাগ সময়ে দাঁড়িয়েই চলাচল করতে হয়।

এ বিষয়ে কমলাপুরে কথা হয় বেসরকারিভাবে পরিচালিত ট্রেনের ইজারাদার এসআর ট্রেডিংয়ের সুপারভাইজার রফিকের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন এই রুটে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার যাত্রী চলাচল করে। এই রুটে নানা সমস্যা আছে। তবে আমরা এ বিষয়ে জিআরপি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি, তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার গোলাম মোস্তফা জানান, প্রতিটি ট্রেনে বগির সংখ্যা সাতটি। এরমধ্যে একটি বগিতে অর্ধেক যাত্রী ও অর্ধেক লাগেজের জন্য। আর ডেমো ট্রেনের বগির সংখ্যা তিনটি। প্রতিটি বগিতে আসন সংখ্যা হচ্ছে ৭০ জনের। আর ডেমো ট্রেনের প্রতি বগিতে বসতে পারে ৩৫ থেকে ৪০ জন। তবে কী পরিমাণ যাত্রী চলাচল করে এই রুটে তার কোনো সঠিক হিসাব নেই বলে জানালেন স্টেশন মাস্টার।

তিনি আরও জানান, এই রুটের বেশির ভাগ ট্রেন বেসরকারিভাবে চলাচল করে। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত চারগুণ নিয়ে চলাচলরত এই রুটের ট্রেনের সেবার মান না বাড়িয়ে বাড়ানো হয়েছে স্টেশন, যাত্রীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে স্টেশন মাস্টার গোলাম মোস্তফা দাবি করেন, রেলের মান পূর্বে যেমন ছিল, বর্তমানেও তেমনই আছে।