English Version
আপডেট : ১০ এপ্রিল, ২০১৭ ১৬:৫৬

সুনামগঞ্জে পানির দামে গরু বিক্রি!

অনলাইন ডেস্ক
সুনামগঞ্জে পানির দামে গরু বিক্রি!

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ‘বালির বাঁধ’ ভেঙে ফসলহানিতে হাহাকার বিরাজ করছে সুনামগঞ্জের কৃষকের মাঝে। ফসলহানি, প্লাবন, ঝড়বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা্র মানুষ। ওই সকল এলাকায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকটসহ নানাবিধ অসুবিধা।  

চলমান অকাল বন্যায় এরই মধ্যে ডুবে গেছে হাওড়ের ফসল। চারদিকের অথৈ পানি ঢুকে পড়ছে বসতবাড়ির ভেতরে। একই সঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেছে গবাদিপশুর চারণক্ষেত্রগুলোও। তার ওপর স্থানীয় বাজারগুলোয় মিলছে না প্রয়োজনীয় গো-খাদ্য। এ অবস্থায় হাওড়াঞ্চলে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে অর্ধেকেরও কম দামে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারিরা।

ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে পরিবারের ভরণপোষণ— দুয়ে মিলে চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা। টানা দুই বছর ফসলহানির কারণে কৃষিনির্ভর এই দুই শ্রেণির মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রাথমিক ধাক্কা এসে পড়েছে গৃহপালিত পশুর ওপর। ধান তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৈনন্দিন নানা প্রয়োজন মেটাতে এবং ঋণ শোধ করতে হাওরাঞ্চলে গরু-ছাগল বিক্রির ধুম পড়েছে। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পশু বিক্রি হওয়ার কারণে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ফসলহারা কৃষকরা।

সরেজমিন দেখা যায়, রাখার জায়গা না থাকা ও খাদ্য সংকটের কারণে অসংখ্য গবাদিপশু বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে এসেছেন উপজেলার কৃষকরা। আর এ সুযোগে প্রায় অর্ধেক দামে বাইরে থেকে আসা ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন এসব পশু।

উপজেলার মধ্যনগর থানার বড় শেখপাড়া গ্রামের আবদুস সালাম জানান, ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে বাজারে নিয়ে হাল চাষের দুটি গরু বিক্রি করেছেন। পনের দিন আগেও যেগুলোর দাম ৭৫ হাজার টাকা ছিল বাধ্য হয়ে সেগুলো ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঋণের টাকা শোধ আর পরিবার চালাতে আমার কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না। ’ 

মধ্যনগর বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন হিল্লোল বলেন, ‘হাওরের ধান তলিয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন শত শত নৌকা বোঝাই করে গৃহস্থরা তাদের গবাদিপশু বিক্রির জন্য নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন পশুরহাটে নিয়ে যাচ্ছেন। ’

উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বাসিন্দা তৌফিক মজুমদার বলেন, ‘আমাদের ১৬টি গরু ছিল। এর মধ্যে ১৩টি প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিয়েছি। খাদ্য সংকট ও জায়গার অভাবে বাকি তিনটিও বিক্রি করে দিতে হবে। ’

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘হাওড় তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর চরম খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। গরু চড়ানোর কোনো স্থান নেই। তার ওপর ফসল না ওঠায় কৃষকদের সংগ্রহে খড়ও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। ’

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় কৃষকদের এ আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ও গোয়ালে আবারো গবাদিপশু পূর্ণ করতে একযুগ লেগে যেতে পারে। ’

সরকারি হিসাব মতে এ এলাকায় তলিয়ে গেছে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল। বেসরকারি হিসেবে এই পরিমাণ পৌনে দুই লাখ হেক্টরের মতো হবে।

এদিকে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি প্রদান এবং জেলাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে সুনামগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক প্রতিবাদ সভা, প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আয়োজন করেছে বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন।