English Version
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২০:৩৩

ডাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায় বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
ডাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায় বাংলাদেশ

গত ১৫ বছরে দেশে ডালের উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণের বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি বাস্তবায়ন এবং দেশের বিজ্ঞানীদের কিছু উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। আমাদের এখন লক্ষ্য ডালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া। এ মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে আন্তর্জাতিক ডাল দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে একজন মানুষকে দৈনিক অন্তত ৪৫ গ্রাম ডাল খেতে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) তথ্যমতে, দেশে ডালের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ২৮ লাখ টন। সে হিসেবে মাথাপিছু ৪৫ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে দেশে ডালের প্রাপ্যতা মিলে গড়ে ২৮ গ্রাম।

এ বিষয়টা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ সালে যেখানে দেশে মাত্র ২ লাখ টনের মতো ডাল উৎপাদন হতো, সেখানে ২০২২-২৩ সালে বিভিন্ন ধরনের ডাল উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টনের মতো। গত ১৫ বছরে উৎপাদন বেড়েছে আগের তুলনায় ৪ গুণ। তবে এখনো তা দেশের চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। এ ব্যাপারে সরকার কৃষকদের মানসম্পন্ন বীজ দিয়ে, আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রণোদনা দিয়ে আরও সহায়তা করতে চায়। আমাদের লক্ষ্য ডাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া।

মন্ত্রী বলেন, ডালের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন, মানসম্পন্ন বীজের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে গবেষণা এবং কৃষকের মাঠের মধ্যে ফলনের ব্যবধান কমিয়ে ফলন বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে লবণাক্ত, খরা ও চরাঞ্চলে ডালের চাষ বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। এ ছাড়া কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি, গেইনের কান্ট্রি ডিরেক্টর রুদাবা খন্দকার প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১৫০ জন অংশগ্রহণ করেন।

বারির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম মাহবুবুল আলম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, দেশে ডালের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এ চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। বাকি চাহিদা মেটাতে ডাল আমদানি করতে হয়। গত বছর প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে ডাল আমদানিতে।

ডাল উৎপাদনে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে উপস্থাপনায় জানানো হয়, দেশে চাষযোগ্য জমির ৭৬ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়। অথচ ডালের চাষ হয় মাত্র ২.৪০ শতাংশ জমিতে। অন্য ফসলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ঠিকতে না পারা, উন্নত জাত ও বীজের অপর্যাপ্ততা, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিযন্ত্রের অপ্রতুলতা প্রভৃতি কারণে ডালের উৎপাদন কম।

উল্লেখ্য, ডালের গুরুত্বকে তুলে ধরার জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রতিবছর ১০ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ডাল দিবস হিসেবে উদ্‌যাপন করে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য মাটি ও মানুষের পুষ্টির জন্য ডাল। টেকসই খাদ্য উৎপাদন এবং সুস্থ জাতি গঠনে দেশে ও বিশ্বব্যাপী ডালের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই এর লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানে ডাল ফসলের গবেষণা ও উৎপাদনে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনজন বিজ্ঞানীকে সম্মাননা দেওয়া হয়।