English Version
আপডেট : ২২ মে, ২০১৮ ১৩:১১

বাজারে নিম্নমানের পাকিস্তানি গম, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাজারে নিম্নমানের পাকিস্তানি গম, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

আন্তর্জাতিক বাজারে গমের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক মুনাফার লোভে নিম্নমানের পাকিস্তানি গম দেশে আমদানী করছে একটি ব্যবসায়ী চক্র। 

ইতোপূর্বে বাংলাদেশ কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে নিয়মিত উন্নতমানের গম আমদানী করে আসলেও হঠাৎ করে গবাদিপশুর ভূষি তৈরিতে ব্যবহৃত ৫ লাখ মেট্রিক টন নিম্নমানের পাকিস্তানি গম আমদানি করেছে চক্রটি।

এছাড়া আরো প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন পাকিস্তানি গম নিয়ে আরো জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙরের অপেক্ষায় রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানি গম দেখতে ভালো মনে হলেও এটি আসলে অধিক পুরানো এবং মানুষের খাবার অনোপযোগী। আমদানীকৃত গমে প্রচুর পাথর, বালি এবং মাটি পাওয়া যায়। এছাড়া আটা তৈরি করার পর তা থেকে বালুকণা বের হয়। এসব আটা মানবদেহের বিশেষ করে পাকস্থলীর অনেক রোগের কারণ হতে পারে।

এর আগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পাকিস্তানি গম খাবারের অযোগ্য হওয়ায় তা কখনোই কিনতেন না। এমনকি ওই গমের প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহও কম ছিল। এদিকে, দেশীয় ব্যবসায়ীরা গেল বছর পাকিস্তান থেকে কোনো গম আমদানী না করলেও চলতি বছরের চারমাসে ৫ লাখ মেট্রিক টম গম আমদানি করেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ৩০ থেকে ৪০ ডলার বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ পাকিস্তানের গমের দিকে ঝুঁকছেন। মুনাফার বিষয়টি আমদানিকারকদের প্রাধান্যের কারণে সাধারণ ভোক্তারা ঠকছেন। এদিকে, আমদানীকৃত গমের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন গমের আটা এরই মধ্যে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে গেছে।  নিম্নমানের গম ও আটা নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।

চলতি বছর দেশে গম আমদানীর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর বাংলাদেশে ৫৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়।

বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন গমের বাজার মূল্য ২১ হাজার ৫০০  টাকার বেশি। পাকিস্তানের গমের মূল্য ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। 

দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, 'নিম্নমানের গম বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থহানি হচ্ছে। এটি ঠেকাতে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে।'         

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, 'মণপ্রতি রাশিয়ার গম ৮২০ থেকে ২৫ টাকা, ইউক্রেনের গম ৮১৫ টাকা, আর্জেন্টিনার গম ৮২০ থেকে ৩০ টাকা ও পাকিস্তানি গম ৮০৫ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।'

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, 'ইউক্রেন আর রাশিয়ার গম উন্নতমানের হওয়ায় এর চাহিদাও আমাদের দেশে বেশি। সে হিসেবে এতো দিন ওই সব দেশে থেকে আমাদের ব্যবসায়ী গম আমদানী করত। অথচ এখন একশ্রেণী মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী পাকিস্তান থেকে নিম্নমানের গম আমদানি করছে।'

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সহকারী পরিচালক মাসুম আরেফিন ঢাকা পোস্টকে জানান, 'এ বিষয়টি এখনো আমাদের নজরে আসেনি। ভোক্তাদের অভিযোগ পেলে আমরা ল্যাবে ওই খাদ্য দ্রব্য পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনো প্রকার ত্রুটি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'