English Version
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৫:৫৭

ঋণের লাগাম টানতে আসছে সতর্ক মুদ্রানীতি

অনলাইন ডেস্ক
ঋণের লাগাম টানতে আসছে সতর্ক মুদ্রানীতি

টানা পাঁচ মাস দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের উপরে রয়েছে। আমদানির চাপে দেশিয় মুদ্রার (টাকা) বিপরীতে ডলারের বিনিময় হারও আকাশচুম্বী।

আবার রেমিট্যান্স প্রবাহে কাক্সিক্ষত গতি না আসা এবং আমদানি ব্যয়ের অনুপাতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, আমদানি অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং কিছু ব্যাংকের আগ্রাসি ব্যাংকিং এর কারণে সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ছে কাক্সিক্ষত হারের চেয়েও বেশি।

এছাড়া নির্বাচনি বছর হওয়ায় সামনে টাকার প্রবাহও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অর্থবছরের শেষ ৬ মাসে সরকারের খরচও বাড়বে। অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির এমন নানা চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য নতুন সতর্ক মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঋণের লাগাম টেনে ধরা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখাই এর লক্ষ্য। এ মাসের শেষ সপ্তাহে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির।

এদিকে, নির্বাচনি বছরের নতুন মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা কী হবে সে বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, মুদ্রানীতিতে আগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উচিত। কেউ বলছেন, আগের চেয়ে আরও সতর্ক ও সংকোচনমূলক হওয়া উচিত। আবার কেউ বলছেন, মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা সংকোচন নয়, কিছুটা সংকোচনমূলক করা উচিত; যাতে প্রকৃত চাহিদার ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ে। তবে মুদ্রানীতি নিয়ে অর্থনীবিদদের ভিন্ন মতামত পাওয়া গেলেও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রশ্নে সবাই একমত পোষণ করেছেন। তারা বলছেন, আর্থিক খাতে যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানে বিদ্যমান নিয়মকানুন যথাযথভাবে

পরিপালনের ওপর জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকারদের যে দায়িত্ব সেটাও নিশ্চিত করতে হবে; যাতে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা আরও সতর্ক ও সংকোচনমূলক করা হতে পারে। এক্ষেত্রে বেসরকারি ঋণের লক্ষ্য ১৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা হতে পারে। চলতি মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত এই লক্ষ্য ধরা আছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ১৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তাই বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে নামিয়ে আনা নতুন মুদ্রানীতির অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখার প্রয়াস থেকে প্রতি ৬ মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই আলোকে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  এরই মধ্যে নিজস্ব কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপদেষ্টা ও সুশীল সমাজের (স্টেকহোল্ডার) প্রতিনিধিদের মতামত নেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আরও কয়েকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওইসব বৈঠকের পর নতুন মুদ্রানীতির ধরন ও হাতিয়ারগুলো সংশোধন ও পরিমার্জন করা হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মুদ্রানীতি প্রথমার্ধে যেরকম ছিল দ্বিতীয়ার্ধেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উচিত। কারণ চলতি মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের যে লক্ষ্য ধরা রয়েছে, সেটা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য যথেষ্ট সহায়ক।

তাই বেসরকারি ঋণের লক্ষ্য অপরিবর্তিত রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, চলতি মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের যে লক্ষ্য ধরা আছে, সেটা এরই মধ্যে অনেক বেশি হয়ে গেছে। এই ঋণ আসলে কোথায় যাচ্ছে সেটা দেখা উচিত। বিশেষ করে এই ঋণ বিনিয়োগে না অর্থপাচারে, নাকি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে সেটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখা উচিত। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও সুশাসনের যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর করণীয় সম্পর্কেও মুদ্রানীতিতে ইঙ্গিত দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এরই মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অসহনীয় মাত্রায় রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ডিসেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ; যা নভেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৮৩ ভাগ। এ মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ; যা নভেম্বরেও ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনি বছরে দেশে টাকার প্রবাহ আরও বাড়তে পারে। আবার শেষ ছয় মাসে সরকারের খরচও বাড়বে। এতে ব্যাংক থেকে সরকারও বেশি ঋণ নেবে। ফলে সরকারি ও বেসরকারি ঋণ মিলে মোট দেশজ ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়বে, যা দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। কারণ মানুষের হাতে বেশি টাকা থাকলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।