English Version
আপডেট : ৩০ নভেম্বর, ২০১৭ ১১:০৯

স্মার্ট সিটি নির্মাণে দরকার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন

অনলাইন ডেস্ক
স্মার্ট সিটি নির্মাণে দরকার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন

স্মার্ট সিটি নির্মাণে দরকার পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন। আর দরকার স্মার্ট নাগরিক। সেই নাগরিকদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে ইউএনডিপি ও এটুআই প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার যৌথ আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী স্মার্ট সিটি ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী দিনে এসব কথা বলেছেন বক্তারা।

বাসযোগ্য আধুনিক নগর নির্মাণে সপ্তাহব্যাপী স্মার্ট সিটি ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ও অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের পরিচালক কবির বিন আনোয়ার বলেন, স্মার্ট সিটি সপ্তাহ চলবে আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে ৪০টিরও বেশি পৌরসভা অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা তাদের নকশা তুলে ধরেছে। এসব নকশায় স্মার্ট সিটি কীভাবে গড়া যেতে পারে তার রূপরেখা দেখানো হয়েছে।

কবির বিন আনোয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত চারলোটা স্কালাইটার, ইউএনডিপি আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী ও মিউনিসিপাল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ ই এম ওয়াহিদুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, অন্য সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবেই সিটি করপোরেশনগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। আমাদের কাজের প্রধান অন্তরায় এই সমন্বয়হীনতার সমস্যা। স্মার্ট সিটি নির্মাণ করতে হলে স্মার্ট নাগরিক দরকার। আর সেই নাগরিকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমাদের প্রতিটি সিটিতে বহু সরকারি জমি রয়েছে। এসব জমি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ না দিয়ে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা গেলে স্মার্ট নগর উপহার দেওয়া সহজ হবে। এসব জায়গা পাওয়া গেলে সেখানে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান করা যাবে, খেলার মাঠ করা যাবে।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, আমাদের অনেক সম্পদ রয়েছে। এই ঢাকা শহরই চারদিকে নদীবেষ্টিত। এসব নদীকে যদি বাঁচানো যায়, আর খালগুলো যদি উদ্ধার করা যায় তাহলে ঢাকার চেহারাটাই পাল্টে দেওয়া যাবে। স্মার্ট নগর গড়ার জন্য পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান দরকার। বর্তমানে ঢাকা শহরে এক কোটি ৭০ লাখ লোকের বসবাস। যে ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে ২০৬০ সালে জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২৫০ মিলিয়ন। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের ভূমির স্বল্পতাও দেখা দেবে। কেননা বিশাল ভূমিখণ্ড সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। ফলে কৃষিজমির একটা বড় অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। এতে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে এখন মাস্ট র‌্যাপিড ট্রানজিট প্ল্যান হচ্ছে। এটি অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে। অনেক আগে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল নানা কারণে সেটি শুরু করতে দেরি হয়েছে। এমআরটি, মেট্রোরেল এসব কাজ শেষ করতে পারলে স্মার্ট সিটির একটা চিত্র ধীরে ধীরে ফুটে উঠবে।

ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার জন্য বিভিন্ন সংস্থার কার্যকরী ভূমিকার অভাব ও ব্যর্থতাকেই দুষলেন তিনি। সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের অভাবেই খালগুলো, জলাশয়গুলো দখল হয়ে গেছে। নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব রক্ষা করতে না পারলে স্মার্ট সিটি গড়ার পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে! আমরা একটা মাস্টার প্ল্যান করেছিলাম। এই পুরাতন বিমানবন্দরের ১০ হাজার একর জমি রয়েছে। এখানে একটা বড় উন্মুক্ত স্থান হতে পারত বিনোদনের কেন্দ্র। পরিকল্পনা করার পরেও সেটি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি আর নেই।

সভাপতির বক্তব্যে কবির বিন আনোয়ার বলেন, স্মার্ট সিটি নির্মাণে সরকার বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। মাস্টার প্ল্যান করতে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের চারদিকে যেসব বাঁধ রয়েছে, সেগুলোর পাশে অন্তত ৫০টি স্থান রয়েছে যেগুলো সরকারি জায়গা, যা অন্যের দখলে চলে গেছে। এগুলো অধিগ্রহণ করে খেলার মাঠ, পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার চারদিকে চারলেনের সার্কুলার রোড করার পরিকল্পনা রয়েছে।