English Version
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১০:০৫

গ্যাসের দাম বাড়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে

অনলাইন ডেস্ক
গ্যাসের দাম বাড়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে

গ্যাসের দাম বাড়ার ঘোষণা আসে বৃহস্পতিবার। বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই দুই দফায় বাড়ানো হবে গ্যাসের দাম। এর ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার রাজধানীতে আধা বেলা হরতাল আহ্বান করেছে সিপিবি ও বাসদ। এদিকে ওই ঘোষণার একদিন পরই গতকাল শুক্রবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগাম বার্তা দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বছরের মধ্যে দুবার সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে। প্রথম দফায় মার্চ থেকে আর দ্বিতীয়বার জুনে বাড়ছে গ্যাসের দাম। এ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন ভাড়া থেকে শুরু করে উৎপাদিত অনেক পণ্যের দাম বাড়বে। শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। এর আগে যদিও দাম বৃদ্ধির সময় বিদ্যুৎ খাতকে বাইরে রেখেছিল কমিশন। এবার দাম বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য পরিবহনে খরচ বাড়বে এবং বাজারের ওপর তার প্রভাব পড়বে। সামগ্রিকভাবে খরচ বাড়বে। কিছু লোককে সুবিধা দেওয়ার জন্য গণমানুষ ভোগান্তির সম্মুখীন হবে।

এদিকে, গ্যাসের দাম বাড়ার একদিনের মাথায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আগাম সংবাদ দিয়েছেনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল শিশু একাডেমি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এবার বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বিদ্যুতের দামের সমন্বয় করতে হবে।

সূত্র মতে, গ্যাসের দাম সর্বশেষ ২০১৫ সালের অক্টোবরে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী দুই দফায় ২২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। প্রথম দফায় বাড়বে ১ মার্চ থেকে। দ্বিতীয় দফায় ১ জুন এ বর্ধিত দাম কার্যকর হবে। গ্যাসের সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বাড়বে। সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্য ক্রয়ে হিমশিম খাবে।

এদিকে, গ্যাসের এ মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা করে আদালতে যাবে বলে জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এরই মধ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীতে আধাবেলা হরতাল আহ্বান করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। গতকাল শুক্রবার তারা এ হরতালের ডাক দেয়।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ায় পরিবহন ভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে। এতে অর্থনীতির পাশাপাশি জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এক বছরের মধ্য দুই দফায় এমন করে মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কথা অনেক দিন ধরেই আলোচনায় ছিল। যার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো। দুই দফায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেশের সব সেক্টরের ওপরই পড়বে। শিল্প খাতের সঙ্গে সঙ্গে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। কারণ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে যদি অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যায়, তা সাধারণ মানুষের জন্য বিপর্যয়। আর এ কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এ অর্থনীতিবিদের।

তিনি বলেন, আমাদের যখন কিছুর দাম বাড়ে তখনই তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কিছুরই দাম বাড়া শুরু করে। তাই এবারের গ্যাসের দাম বাড়লে অন্যান্য পণ্যের দাম কেমন বাড়ছে তা দেখতে হবে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম। তাই গ্যাসের দাম বাড়ায় জনজীবনে যে প্রভাব পড়বে, তা কমাতে সরকার চাইলে তেলের দাম কমাতে পারে।

 

এদিকে শুনানির সঠিক নিয়মকানুন না মেনেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে অভিযোগ কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশ অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নতুন সভাপতি গোলাম রহমানের। তিনি বলেন, প্রতিবছরই জীবনযাত্রার মান বাড়ছে। যখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হয়, তখন থেকেই শুনানি চলছিল। শুনানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কেউ এ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের সঙ্গে ছিলেন না। নিয়ম না মেনে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই এর বিরুদ্ধে ক্যাব আদালতে যাবে।

তিনি বলেন, এর আগেও দেখা গেছে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর গাড়ি ভাড়া বেড়ে গেছে। এবার যেহেতু দুবার মূল্যবৃদ্ধি করা হবে তাই ভাড়াও দুই দফায় বাড়বে। একই সঙ্গে গ্যাসের সঙ্গে যুক্ত অন্য সব কিছুরই দুদফায় দাম বাড়বে। ফলে এ বছর সাধারণ মানুষের ওপর দুদফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

 

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে দেশের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ালে যে শুধু শিল্প খাত বিপর্যস্ত হবে তা নয়, সাধারণ মানুষের ওপরও তার প্রভাব পড়বে। ফলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকাংশে বেড়ে যাবে। বিশেষ করে পরিবহন খরচ, বাণিজ্যিক উৎপাদন ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তা ছাড়া একজন শিল্পমালিকের উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ক্রেতার কাছ থেকে মূল্য না পেলে তার প্রভাব পড়বে সাধারণ শ্রমিকদের ওপর। তাই এ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি একদিকে যেমন শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসবে, তেমনি শ্রমিকদেরও চাপের মধ্যে ফেলে দেবে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, বাণিজ্যিকসহ সব ধরনের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার ফলে দেশের বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, তেমনি উৎপাদনের সক্ষমতাও হ্রাস পাবে। আর উৎপাদন হার হ্রাস পেলে দেশীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য খাতগুলোর বাজার পেতেও প্রতিযোগিতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।