English Version
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১২:১৭

লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে ঈগলু ঘি’র

নিজস্ব প্রতিবেদক
 লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে ঈগলু ঘি’র

মানোত্তীর্ণ না হওয়ায় বাতিল করা হচ্ছে আবদুল মোনেম লিমিটেডের মালিকানাধীন মেসার্স ঈগলু ফুড লিমিটেডের ঘি উৎপাদনের লাইসেন্স। লাইসেন্স বাতিলের সব প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শেষ করে এনেছে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসআই)।

বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৪ মে বিএসটিআইয়ের সার্ভিলেন্স টিম বাজার থেকে ‘ঈগলু’ ব্র্যান্ডের ঘিয়ের নমুনা সংগ্রহ করে। ঈগলু ফুড লিমিটেড উৎপাদিত এ ঘিয়ের নমুনার ১২টি প্যারামিটার পরীক্ষা করা হয়। 

বাংলাদেশ মান ৯০৮:২০১২ অনুযায়ী এ পরীক্ষা করে বিএসটিআই। এতে দেখা যায়, ঘিয়ের ময়েশ্চার, অ্যাসিড ভ্যালু ও ফ্যাট- এ তিন গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারে নির্দিষ্ট মান রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে ঈগলু। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন এ ব্র্যান্ডের ঘিয়ের লাইসেন্স বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানটি বরাবর কারণ দর্শানো নোটিস পাঠায় বিএসটিআই। নোটিসটির জবাব গত বছরের ২৯ জুনের মধ্যে জানাতে বলা হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ মানের সমপর্যায়ের না হওয়ায় ঘি পণ্য বিক্রি ও বিতরণ এবং এর বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন প্রচারও বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। 

এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্ণিত বিষয়ে বিএসটিআইকে অবহিত না করলে অথবা সন্তোষজনক জবাব না পেলে কর্তৃপক্ষ বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে বলেও জানানো হয় নোটিসে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের ঘি বাজারজাতের এ অভিযোগ মানতে রাজি না হওয়ায় গত ১৮ ডিসেম্বর খোলাবাজার ও ঈগলু ফুডের শ্যামপুরের কারখানা থেকে আবারো নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই নমুনা পরীক্ষায়ও উতরাতে ব্যর্থ হয় ঈগলু। পরে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ ঈগলু ব্র্যান্ডের ঘি উৎপাদনের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

জানতে চাইলে বিএসটিআই পরিচালক (সিএম, অতিরিক্ত) প্রকৌশলী এসএম ইসহাক আলী  বলেন, ঈগলু ব্র্যান্ডের ঘিয়ের নমুনা পরীক্ষা করে প্রথম দফায় মান খারাপ পাওয়ায় তাদেরকে সংশোধনের জন্য কারণ দর্শানো নোটিস দেয়া হয়। দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও মান খারাপ পাওয়া যায়। এজন্য তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

এদিকে বিএসটিআইয়ের এ পদক্ষেপের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ঘি উৎপাদনই বন্ধ করতে যাচ্ছে বলে জানান মেসার্স ঈগলু ফুডস লিমিটেডের কারখানা ব্যবস্থাপক ইকরাম হোসেন। 

তিনি বলেন, বিডিএস ও খাদ্য আইন অনুযায়ী দুটি মান রয়েছে। খাদ্য আইন অনুসরণ করতে গেলে বিএসটিআইয়ের মান অনুসরণ সম্ভব হয় না। এজন্য আর ঘি উৎপাদন করা হবে না বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুধু ঈগলু ব্র্যান্ডের ঘি নয়, বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ ঘি-ই মানহীন। রাজধানীসহ দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া এসব ঘি ডালডা, সয়াবিন বা পাম তেলের সঙ্গে সুগন্ধি মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বাজারে ‘ঘি’ ও ‘বনস্পতি’ নামে বিক্রি হওয়া পণ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশই ভেজাল ও মানহীন। এসব পণ্যে দুধের কোনো অস্তিত্বই নেই। ভেজিটেবল ফ্যাট ও পশুর চর্বির সঙ্গে সুগন্ধি মিশিয়ে এসব পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে ক্যাব কর্মকর্তারা রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শান্তিনগর ও নিউমার্কেট থেকে ১১টি ব্র্যান্ডের ঘি ও দুটি ব্র্যান্ডের বনস্পতির নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে তা জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা করা হয়। এতে ১১টি ব্র্যান্ডের মধ্যে নয়টিতেই ভেজাল পাওয়া যায়।