English Version
আপডেট : ১০ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৪:৫৩

হল-মার্ক নিয়ে বিবাদে ব্যাংকগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক
হল-মার্ক নিয়ে বিবাদে ব্যাংকগুলো

হল-মার্কের দায় দেনা নিয়ে বিরোধে ব্যাংকগুলো হল-মার্কের দায় দেনা নিয়ে বিরোধে ব্যাংকগুলো হল-মার্কের দায়-দেনা নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে ব্যাংকগুলো। 

প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিভিন্ন বিলের বিপরীতে পরিশোধিত অর্থ এখন ফেরত চাইছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। অর্থ ফেরত চেয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠিও পাঠিয়েছে সোনালী ব্যাংক।

আমদানিকারকের ব্যাংকের স্বীকৃতি বা নিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে রফতানিকারকের ব্যাংক স্বীকৃত বিল কিনে থাকে। রফতানিকারকের ব্যাংক এ বিলের বিপরীতে বিক্রেতাকে অর্থ পরিশোধ করে থাকে। কিন্তু হল-মার্কের ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ছিল একই গ্রুপভুক্ত। এর মধ্যে অনেকগুলোই ছিল ভুয়া। হল-মার্কের ওইসব প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত বিল পরিশোধ নিয়েই এ বিবাদ দেখা দিয়েছে।

এ ধরনের ১৯৫টি বিলের বিপরীতে জনতা ব্যাংককে দেয়া ১ কোটি ১২ লাখ ডলার ফেরত চেয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটির হিসাব থেকে কেটে রেখে এই বিল পরিশোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সোনালী ব্যাংক বলছে, জনতা ব্যাংককে পরিশোধিত স্বীকৃত বিলে জাল-জালিয়াতি হয়েছে। এসব বিলের বিষয়ে ফৌজদারি মামলাও দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাই এসব বিলের বিপরীতে জনতা ব্যাংকের অনুকূলে পরিশোধিত অর্থ ফিরিয়ে আনা আবশ্যক। কারণ বিলের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের জাল-জালিয়াতি প্রমাণিত হলে ওই বিলের টাকা সোনালী ব্যাংক ফেরত পাবে— বিল পরিশোধের আগে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন অঙ্গীকারই নিয়েছিল।

জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বিলের বিষয়ে জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অর্থ ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছি। নতুন করে আর কোনো অর্থ কেটে না রাখতেও অনুরোধ করেছি।

সোনালী ব্যাংকের দেয়া স্বীকৃত বিল কিনে প্রায় ৩৫টি ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি হল-মার্কের হাতে তুলে দেয়, যা সোনালী ব্যাংকের ক্ষেত্রে নন-ফান্ডেড দায় সৃষ্টি করে। স্বীকৃত বিল কেনা এসব ব্যাংকের মধ্যে সরকারি-বেসরকারির পাশাপাশি রয়েছে বিদেশী ব্যাংকও। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংক পাঁচটি, বেসরকারি ২৫টি ও বিদেশী ব্যাংক পাঁচটি। 

জনতা ছাড়াও হল-মার্কের স্বীকৃত বিল ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে— অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, কৃষি, প্রিমিয়ার, ইউসিবিএল, দ্য সিটি, উত্তরা, প্রাইম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী, স্বীকৃতিপত্র ক্রয়ের আগে শাখাগুলো থেকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কথা থাকলেও হল-মার্কের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় হল-মার্কসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত বিলের সংখ্যা ২ হাজার ৫৩০। এসব স্বীকৃত বিলের সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়টি বেরিয়ে আসার পর সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের অর্থ পরিশোধ বন্ধ হয়ে যায়। স্বীকৃত বিল ক্রয়কারী ব্যাংকগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা কেটে নিয়ে বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে কেটে অন্য ব্যাংকগুলোকে এ পর্যন্ত ৬৬৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এখনো ১ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকার বিল সোনালী ব্যাংকের কাছে পাওনা রয়েছে। তবে সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে হোটেল শেরাটন শাখার জালিয়াতিপূর্ণ স্বীকৃত বিলের বিপরীতে আর কোনো অর্থ যাতে পরিশোধ করা না হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি সে অনুরোধ জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, বহুল আলোচিত হল-মার্ক গ্রুপকে সোনালী ব্যাংক ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির বিপরীতে ফোর্সড ঋণ দিয়েছিল। এক্ষেত্রে ব্যাংকটি অন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ও স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সোনালী ব্যাংকের পাঠানো চিঠি দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি সোনালী ব্যাংক এমন কোনো চিঠি দিয়ে থাকে, তা হলে নীতিমালা অনুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১০-১২ সালের মার্চ পর্যন্ত অনিয়মের মাধ্যমে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা আত্মসাত্ করে হল-মার্কসহ ছয় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে হল-মার্ক একাই সরিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় রাজধানীর রমনা থানায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর ১১টি ও ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে আরো ২৬টি মামলা দায়ের করে দুদক।

হল-মার্ক গ্রুপের ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে ম্যাক্স স্পিনিং ও আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের মধ্যে কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় না হওয়া সত্ত্বেও ভুয়া বিল তৈরি করে জনতা ব্যাংকের জনতা ভবন করপোরেট শাখার ৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সর্বশেষ গত নভেম্বরে আরো একটি মামলা দায়ের করে দুদক। 

মামলায় হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান-এমডির পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের তিন ও জনতা ব্যাংকের নয় কর্মকর্তাসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।