English Version
আপডেট : ১৯ নভেম্বর, ২০১৮ ১১:৪৭
সূত্র:

আ. লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নেই ৫০ এমপি!

আ. লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নেই ৫০ এমপি!

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই গুছিয়ে এনেছে। সোমবার (১৯ নভেম্বর) প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে বৈঠকে বসছে দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। গণভবনে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, গত চারটি বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নাম চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। সেখানে ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় কমপক্ষে ৫০ জন বর্তমান এমপির আসনে বিকল্প প্রার্থীর নাম ওঠে এসেছে। বিকল্প এসব প্রার্থীর মধ্যে বেশকিছু আসনে সাবেক এমপিরা ঠাঁই পেয়েছেন।

এছাড়া প্রায় ১২ জন আছেন, যারা একেবারে নতুন মুখ। পাশাপাশি জাতীয় ব্যক্তিত্ব, তারকা, ব্যবসায়ী নেতা ও সাবেক আমলা আছেন বেশ কয়েকজন। তালিকায় আছেন বেশ কয়েকজন তরুণ।

বোর্ডের একজন সদস্য জানান, হুট করে না, অনেক পর্যবেক্ষণ, দীর্ঘদিন থেকে তৃণমূল জরিপ এবং সর্বশেষ এমপিদের আমলনামা বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত তালিকা করা হচ্ছে। যেসব এমপিকে বাদের তালিকায় রাখা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন ও নেতাকর্মীশূন্য।

বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছেন- এমন এমপিও আছেন এ তালিকায়। ভিআইপি ও কেন্দ্রীয় নেতা আছেন কয়েকজন। তবে বেশ জনপ্রিয়- এমন কয়েকজন এমপিকে মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির কারণে বাদের তালিকায় রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, মনোনয়ন বোর্ডের সভায় করা তালিকায় ৭০ থেকে ৮০টি আসনের ঘর ফাঁকা আছে। এসব আসনের ৩০টির মতো মহাজোটের। বাকিগুলো আওয়ামী লীগের।

এসব আসনে বিকল্প প্রার্থীর একটি তালিকা করা হয়েছে। সেখানে অনেক নতুন মুখ আছে। আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা। তবে আজকের বৈঠকে এসব আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। পাশাপাশি এ বৈঠকে মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজটিও করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের অন্যতম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত। এমপিদের মধ্যে অনেকে বাদ পড়বেন, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

তা না হলে নতুনরা আসবেন কী করে? আজকের মধ্যে আমরা এ তালিকা চূড়ান্ত করব। প্রধানমন্ত্রী চাইলে যে কোনো মুহূর্তে ঘোষণা হবে।

মহাজোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে কাজী জাফর উল্লাহ আরও বলেন, আমরা আগে দলীয়ভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করব। এর মধ্যে মহাজোটের আসন নিয়ে বসব।

চূড়ান্ত করে সেটিও ঘোষণা করা হবে। আর এটি দু-একদিনের মধ্যেই হবে। যেসব আসনে মহাজোটের প্রার্থী থাকবেন, সেখানে আমাদের দলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, মহাজোটের আসন বণ্টন নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটিও আজ-কালের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, জোটের প্রার্থী কাকে কোথায় দিলে জিতে আসতে পারবে, সেভাবে আসন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেককেই ছাড় দিতে হবে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, মহাজোটের আসন বণ্টন করতে গিয়ে বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দলটি। অনেক আসন আছে, যেখানে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন এমপি-মন্ত্রী আছেন- সেগুলোয় মনোনয়ন দাবি করছে জোট ও মহাজোট শরিকরা।

এর মধ্যে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কিশোরগঞ্জ-১, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সিলেট-১, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের চট্টগ্রাম-১, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঢাকা-১২, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের কুমিল্লা-১, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের গাজীপুর-১, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার গাইবান্ধা-৫ আসন রয়েছে। আবার এসব আসনের কয়েকটিতে জোট শরিকদের আছেন একাধিক প্রার্থী।

জানা গেছে, এসব আসনে যেসব প্রার্থী দাবি করছে জোট শরিকরা, সেসব প্রার্থীর জনপ্রিয়তা বর্তমান এমপি-মন্ত্রীর ধারে-কাছেও নেই। তারপরও জোরগলায় কিছু বলতে পারছে না আওয়ামী লীগ। এদিকে দ্রুত মহাজোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশে আওয়ামী লীগকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে জোটের শরিকরা।

যুক্তফ্রন্টের শরিক ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানির জন্য নীলফামারী-১ আসনটি চাওয়া হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন চেয়েছেন যুক্তফ্রন্ট নেতা মাহী বি চৌধুরী।

এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। ঢাকা-১৭ আসনে মহাজোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বর্তমান এমপি।

এ আসনে মহাজোটের ব্যানারে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা প্রার্থিতা চেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। আসনটিতে মহাজোটের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। পূর্বে এ আসনটির এমপি ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। এখানেও প্রার্থী বাছাই নিয়ে জটিলতায় পড়েছে আওয়ামী লীগ।

এখানেই শেষ না। আওয়ামী লীগের এমন অনেক এমপি আছেন যারা দল ও নিজের যোগ্যতায় যে কোনো কঠিন মুহূর্তে জয় নিশ্চিত করতে পাববেন- এমন আসনও দাবি করছে মহাজোটের শরিকরা। এসব আসনে জোটের জন্য ক্ষমতাসীনরা ছাড় দিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।