English Version
আপডেট : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৪:০৪

বিএনপিকে মাঠে নামার সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ

অনলাইন ডেস্ক
বিএনপিকে মাঠে নামার সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপিকে আন্দোলনে মনোযোগ দেওয়ার কোনও সুযোগ দিতে চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মামলা জটিলতায় ব্যস্ত রাখতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় ফেলে বিএনপিকেও ব্যস্ত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের একাধিক এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, বিএনপি যাতে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে না পারে, সেজন্যই গ্রেফতারি পরোয়ানা কৌশলের দিকে ঝুঁকছে ক্ষমতাসীনরা। 

সূত্র মতে, এই পরোয়ানা মূলত গ্রেফতারের জন্য নয়। বিএনপি যাতে করে আন্দোলনের কথা মাথায় আনতে না পারে, সেজন্য দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা পর্যন্ত সবাইকে চাপের মধ্যে রাখতেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে। তবে এসব কথা প্রকাশ্যে বলতে রাজি হচ্ছেন না আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে তারা বলছেন, এটা আইনের বিষয়। রাজনীতির কোনও বিষয় নয়।

আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, বিনা বাধায় দেশে যাতে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেই পরিকল্পনা থেকে বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। সে কারণেই বিএনপিকে আন্দোলন নিয়ে ভাবার মতো সুযোগ দিতে চায় না। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা নিয়ে বিএনপি যাতে ব্যস্ত থাকে, বর্তমানে সেই কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ। সরকার দলীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান,এসব গ্রেফতারি পরোয়ানা আওয়ামী লীগেরই রাজনৈতিক কৌশল। এসব পদক্ষেপের ভেতর দিয়ে বিএনপিকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই মূল লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত চার জন নেতা এসব তথ্য জানান। তারা বলেন,‘যেসব গ্রেফতারি পরোয়ানা এ পর্যন্ত জারি করা হয়েছে, এর একটিও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের উদ্দেশে নয়। এগুলোর বেড়াজালে ফেলে মূলত পুরো বিএনপিকে মামলা ভীতিতে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে বিএনপির  অন্য নেতাদের মধ্যেও একটা ভীতি বজায় রাখার চিন্তাও কাজ করছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে।’  

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও তাকে গ্রেফতারের জন্যে এসব পরোয়ানা নয় জানিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলছেন,‘এই গ্রেফতারি পরোয়ানার মূল লক্ষ্য শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভেতরে ভীতির সঞ্চার সৃষ্টি করা। আর খালেদার মামলা ও পরোয়ানা নিয়ে বিএনপিকে চিন্তায় নিমগ্ন রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা মানেই তো অ্যারেস্ট অর্ডার। কিন্তু সেই অর্ডার কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না, সেটা পুরোটাই আইনের ব্যাপার। এই নিয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

তাহলে কি বিএনপিকে চাপ রাখতেই এই উদ্যোগ,জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তা করবো কেন? বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আমরা মনে করি, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। তাহলে আমরা বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করবো কেন?’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সরকার বা আওয়ামী লীগ জারি করেনি, করেছে বিচার বিভাগ। আর এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তিনি (খালেদা) ডেট অনুযায়ী আদালতে উপস্থিত হয়নি বলে।’

ফারুক খান বলেন, ‘ এর সঙ্গে সরকার বা রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নাই। খালেদার আইনজীবীদের বুঝতে হবে- আইন নিয়ে রাজনীতি চলবে না।’

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা আরও জানান, এসব গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্যদিয়ে বিএনপির শক্তি-সামর্থ্য অবশিষ্ট কী রয়েছে, মূলত সেটাও দেখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। তারা যাতে নির্বাচন পর্যন্ত খালেদাকে রক্ষার কৌশল নিয়েই ব্যস্ত থাকে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতেও যেন সময় না পায়, সেই কৌশল নিয়েই এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ।

এছাড়া, গ্রেফতার আতঙ্ক ও মামলার চাপে রেখে বিএনপিকে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে  আনার এটি একটি রাজনৈতিক  কৌশলও  ক্ষমতাসীনদের।